রাতের আঁধার নামতেই ছিনতাই ডাকাতি
রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন আতঙ্কিত মানুষ * কূটনীতিকপাড়ায়ও আতঙ্ক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: যুগান্তর
দেশের কোথাও এখন পুলিশি কার্যক্রম নেই। এ অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন সাধারণ মানুষ। রাতের অন্ধকার যত গভীর হয়, নিরাপত্তাহীনতা ততই বাড়তে থাকে। ডাকাত, ছিনতাইকারী হানা দিচ্ছে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়।
অস্ত্রের মুখে লুটে নিচ্ছে বিভিন্ন মানুষের অর্থকড়িসহ মূল্যবান সম্পদ। এছাড়া চলছে প্রতিপক্ষের বাসাবাড়িতে হামলা, লুটপাট। ঢাকার থানাগুলো এখন পোড়া ধ্বংসস্তূপ, ইট-সুরকি পর্যন্ত লুটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এমন অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার থেকে ঢাকার সব থানা, সড়ক ও বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সাময়িকভাবে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের অনুপস্থিতিতে বুধবার থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারা না থাকায় প্রায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে কূটনীতিকপাড়া। এ কারণে আতঙ্কে দিন কাটছে ঢাকায় কর্তব্যরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের। মঙ্গলবারও রাজধানীর কোথাও পুলিশের কোনো তৎপরতা বা উপস্থিতি দেখা যায়নি।
কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার সদস্যদের সংগঠন-পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা করেছে পুলিশের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি পালন করবেন। এতে কার্যত অরক্ষিত থানা, সড়ক, পাড়া মহল্লা। এ অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থানা ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে।
আনসার সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার ৫৬টি ট্রাফিক পয়েন্টে ৭২৬ জন ব্যাটালিয়ন আনসার ও অঙ্গিভূত আনসার নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা তিন শিফটে ভাগ করে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষার্থীরা যারা ট্রাফিক শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে কাজ করছেন, তাদেরকে সহযোগিতা করছেন আনসার সদস্যরা।
এছাড়া ডিএমপির ৫০ থানায় ৪০০ আনসার সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা থানা ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করছেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগে নিযুক্ত ছিল ৯০০ আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য। বুধবার আরও ১০০ সদস্য সেখানে কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দরে ৪০ জন এবং সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে ৩০ জন ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. ফখরুল আলম যুগান্তরকে বলেন, আমাদেরকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আনসার মোতায়েন করেছি। মূলত থানাগুলোর স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণে এবং সড়কে যেহেতু ট্রাফিক পুলিশ নেই, সেজন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের আনসার সদস্যরা কাজ করছেন। তিনি বলেন, সড়কে যেসব আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, তারা আগেও ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কাজ করছেন। তাছাড়া ছাত্ররা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে এসেছে, তাদেরকেও আমরা সহযোগিতা করছি।
তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার রাতে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আসতে থাকে মোহাম্মদপুরের কিছু এলাকায় ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের খবর। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দারা তাদের অসহায়ত্বের কথা জানাতে থাকেন। রাত ২টার দিকে মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ে একটি বাড়িতে ডাকাতির খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর টহল টিম সেখানে যায়।
জানা গেছে, সেনাবাহিনী পৌঁছেছে সেই খবরে ভবন থেকে চিৎকার করতে থাকেন আতঙ্কিত মানুষ। পাশের একটি গলিতে অবস্থান নেয় ডাকাতদল। সেনাসদস্যরা একটু এগিয়ে যেতেই মোটরসাইকেলে করে দ্রুত পালায় দৃর্বৃত্তরা। স্থানীয় একজন জানান, রাতে এলাকার কিছু মানুষ তাদের পরিচয় দিয়ে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে জিম্মি করা হয় দারোয়ানকে। এরপর একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে বাসিন্দাদের অস্ত্রের মুখে লুট করে নেয় নগদ টাকা।
একজন ভোক্তভোগী বলেন, প্রথমে রামদা তার ঘাড়ে ধরে। এরপর ৫ লাখ টাকা দাবি করে। পরে তার বাসায় থাকা কিছু সৌদি রিয়াল এবং কিছু টাকা মিলিয়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে যায়। আর ৫ লাখ টাকা রেডি করার হুমকি দিয়ে যায় ডাকাতরা। এরপর টহল জোরদার করে সেনাবাহিনী। এসময় সেনাসদস্যদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা।
শুধু তাই নয়, ডাকাত আতঙ্কে মোহাম্মদপুর এবং শ্যামলী এলাকায় বিভিন্ন মসজিদের মাইকে নিরাপত্তার স্বার্থে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করার কথা জানানো হয়। এরপর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় রাস্তায় অসংখ্য মানুষ এবং বিভিন্ন অলিগলিতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করছিলেন। তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সেখানে নিরাপত্তার খুবই অভাব দাবি করে, ভুক্তভোগী মানুষ নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, তারা জড়ো হয়ে বেশ কিছু মানুষ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে বুধবার আইএসপিআর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে জনসাধারণের জানমাল এবং সরকারি স্থাপনাসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। যে কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, হানাহানি ও প্রাণহানির সম্মুখীন হলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বিভিন্ন ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের নাম্বার দেওয়া হয়েছে।