শ্রমিকদের বেতন দিতে সহজ শর্তে ঋণ চায় বিটিএমএ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে টেক্সটাইল মালিকরা অনভিপ্রেত ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের বেতন দিতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়াসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। দাবি সংবলিত চিঠি বুধবার (৩১ জুলাই) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মোহাম্মদ আলীকে দিয়েছে সংগঠনটি।
বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকনের সই করা চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে।
চিঠিতে বলা হয়, গত ২ সপ্তাহের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখার ক্ষেত্রে যদিও সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব ছিল না তথাপি আমরা বেশ কিছু অনভিপ্রেত ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।
সংগঠনটি বলছে, যথাসময়ে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে না পারা, বাজার বন্ধ থাকায় স্থানীয় মিলগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারা ও রপ্তানিমুখী পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না।
ফলে মিলগুলো মারাত্মক আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। গত দুই সপ্তাহের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মিলগুলো বন্ধ থাকায় ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি অর্থাৎ প্রচ্ছন্ন রপ্তানি খাতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্রয়াদেশ বাতিল, উৎপাদন হ্রাস পাওয়া, মিলগুলোতে শ্রমিকদের অনুপস্থিতি, সাপ্লাই চেইন কাঁচামাল না পাওয়াসহ সব মিলিয়ে টেক্সটাইল শিল্পের মালিকরা ভয়াবহ কঠিন সময় অতিক্রম করছে।
শ্রমিকদের জুলাই মাসের বেতন পরিশোধের সময় সন্নিকটে জানিয়ে সংগঠনটি তিনটি দাবি জানিয়েছে। দাবির মধ্যে রয়েছে বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতি বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেক মিলের চলতি মাসের বেতন সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সুদ হারে এক বছর মেয়াদে ব্যাংক থেকে ঋণ হিসাবে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। চলতি জুলাই মাসের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সুবিধার্থে একই সুদ হারে (২%) এক বছর মেয়াদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
ক্রমাগত লোকসানে থাকা প্রচ্ছন্ন রপ্তানিমুখী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে এ মুহূর্তে মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে সব মেয়াদি ঋণের কিস্তি আগামী ছয় মাসের জন্য সুদবিহীন করে কিস্তি পরিশোধ স্থগিত রাখার দাবি জানানো হয় চিঠিতে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি বিটিএমএ’র সদস্যভুক্ত মিলগুলো কর্তৃক ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে সরবরাহকৃত ইয়ার্ন ও ফেব্রিকের বিপরীতে তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট এলসি প্রদানকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক এক্সপেক্টেড বিল যথাসময়ে পরিশোধের বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়। বিলের অর্থ পেলে সংকট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলবে। চিঠিতে বলা হয়, কোনো প্রণোদনার আবেদন করছি না। ঋণ ধারাবাহিকভাবে এক বছরের মধ্যে মালিকরা পরিশোধ করবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, বিটিএমএর সদস্য মিলগুলো বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পের মধ্যে নিট খাতের প্রয়োজনীয় সুতার প্রায় ৯০ শতাংশ এবং উইভিং এ ৪৫% সরবরাহ করছে। এছাড়াও ডেনিম, হোম টেক্সটাইল ও টেরি টাওয়ালের শতভাগ দেশীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি আয়ে ব্যাপক অবদান রাখছে। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে প্রিয় মাতৃভূমি এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্য, নাশকতা ও আগুন সন্ত্রাসের কারণে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি হয়েছে। দেশের এই কঠিন সময়ে সরকার সীমাহীন ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলায় বলিষ্ঠ এবং যথার্থ পদক্ষেপকে বিটিএমএ সমর্থন জানায়।