সহিংসতায় ঢাকায় ১০ দিনে প্রাণহানি ১০৩
নিহতদের বেশির ভাগই নিম্নআয়ের মানুষ
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশে নিহতের সংখ্যা নিয়ে একেক পক্ষ একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছে। সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১৫০ জন। অন্যদিকে আন্দোলনরত ছাত্ররা ২৬৬ জনের নিহতের তালিকা দিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ঢাকায় ১০৩ জন নিহতের তথ্য দেওয়া হয়েছে। ১৬ থেকে ২৬ জুলাই-১১ দিনে তারা নিহত হন বলে ডিএমপি জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই দলনিরপেক্ষ ও নিম্নআয়ের মানুষ বলেও জানায় ডিএমপি। এ সংক্রান্ত একটি তালিকা তৈরি করেছে পুলিশের বৃহৎ এই ইউনিট। তালিকাটি যুগান্তরের হাতে এসেছে।
তালিকা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৯, বিএনপির ১২, জামায়াত-শিবিরের ২, আটরশির (জাকের পার্টি) ১ এবং দলনিরপেক্ষ ৫৯ জন রয়েছেন। এছাড়া ১৮ জন ছাত্র, ছয়জন বেসরকারি চাকরিজীবী এবং দুজন সাংবাদিকের নাম রয়েছে। শ্রমিক, হকার, দিনমজুর এবং দোকান কর্মচারীর সংখ্যা ৩৯ জন। আছেন নয়জন ব্যবসায়ী, ছয়জন করে গাড়িচালক ও রিকশাচালক, তিনজন পুলিশ সদস্য, একজন আনসার সদস্য, তিন শিশু (১২ বছরের কম বয়সি) ও অজ্ঞাতনামা ১০ জন।
ডিএমপি থেকে প্রাপ্ত তালিকা থেকে জানা যায়, থানাওয়ারি সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে যাত্রাবাড়ীতে। এখানে নিহতের সংখ্যা ৩২ জন। তাদের মধ্যে ২০ জুলাই এএসআই মুক্তাদির নিহত হয়েছেন যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ ফুটওভারব্রিজের নিচে। তার মাথার মাঝখানে গভীর কাটা দাগ আছে। একই দিনে একই এলাকায় নিহত হন পুলিশ সদস্য নায়েক গিয়াস উদ্দিন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থান থ্যাঁতলে দেওয়া হয়েছে। কাজলা আদর্শ স্কুলের সামনে ১৭ জুলাই নিহত হন সৌদি ফেরত ইমরান। তিনি দনিয়ায় বাবুর্চির কাজ করতেন। গান শট ইনজুরিতে তিনি মারা যান। তার মাথায় ৩৭টি শেলাই দেওয়া হয়েছিল।
হানিফ ফ্লাইওভার কাজলা টোলপ্লাজার সামনে ১৮ জুলাই নিহত হন সাংবাদিক মেহেদী হাসান। তিনি নিহত হন শটগানের গুলিতে। তার সুরতহালের সময় কপালের ওপর তিনটি পিলেটের কালো দাগ দেখা যায়।
ওইদিন কাজলা এলাকায় নিহত হন কুমিল্লার মুরাদনগরের নাজমুল কাজী। তার মাথা ও কপালে ছিল আঘাতের চিহ্ন। তিনি ছিলেন মুরাদনগরের এমপি জাহাঙ্গীর আলমের সহযোগী। এদিন শনির আখড়া এলাকায় নিহত হন ব্যবসায়ী ওয়াসিম শেখ। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ফুটপাতে পোশাকের দোকান ছিল তার। মারামারির কথা শুনে দোকান দেখতে এসে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
২০ জুলাই শনির আখড়ায় নিহত হন মাদ্রাসাছাত্র আব্দুল্লাহ। সুরতহালের সময় তার হাত ও কাঁধের হাড় ভাঙা ছিল। বুকের বামপাশে ছিল তিনটি পিলেটের দাগ। তার বাবা ১৫ বছর ধরে স্বর্ণের দোকানে কাজ করেন। ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কুতুপ আলী মাদ্রাসার সামনে রিকশা চালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হন শাকিল। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে মারা যান এই রিকশাচালক। ১৮ জুলাই কাজলা মহাড়কের ওপর নিহত অবস্থায় পড়ে ছিলেন ২৮ বছর বয়সি এক যুবক। এখনো তার পরিচয় মেলেনি। তার বুকের পাশ থেকে বাম বগলের নিচে পিলেটের কালো দাগ ছিল। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে তার দাফন হয়েছে।
১৮ জুলাই মুগদার গোলাপবাগে নিহত হন শ্যামলী পরিবহণের চালক আবু জাফর ওরফে বাদশা মিয়া। তার গলা থেকে নাভি পর্যন্ত ছিল ছিটা গুলির চিহ্ন। ২০ জুলাই উত্তরা পূর্ব থানা এলাকার আজমপুরে নিহত হন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। সুরতহালের সময় তার পেটের বামপাশে দুটি ছিদ্র ছিল। গার্মেন্ট মালামাল কিনতে এসে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
ওইদিন যাত্রাবাড়ী কুতুপ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শটগানের গুলিতে নিহত হন ডেমরা রওশন আরা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র নাইম হাওলাদার। তিনি বিএনপি সমর্থিত উল্লেখ করে পুলিশ জানিয়েছে, নাইমের কাঁধের সামনে গুলির চিহ্ন ছিল। ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কুতুব আলী মসজিদের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ময়লার ভ্যানচালক মো. মেহেদী। তার গলার বাম পাশে ও বুকের বামপাশে গুলি লেগেছিল।
১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা মহাসড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ৩৫ বছর বয়সি এক অজ্ঞাত যুবক। তার মাথার বাম পাশে গুলি লেগেছিল। ওইদিন একই এলাকায় নিহত হন ৩০ বছর বয়সি এক যুবক। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল জখমের চিহ্ন। একই দিনে একই এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ২৫ বছর বয়সি এক যুবক।
২০ জুলাই শনির আখড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জিহাদ হোসেন নামে এক যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি বিএনপি সমর্থক। তিনি কবি নজরুল কলেজের ছাত্র ছিলেন। একই দিন একই এলাকায় নিহত হয় ডেমরার ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ১৩ বছর বয়সি ইব্রাহিম। তার মাথার পেছনের দিকে গুলি লেগেছিল। সে এলাকার লোকদের সঙ্গে বিক্ষোভে এসেছিল।
১৯ জুলাই কাজলা মহাড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শরিফ নামের এক যুবক। তার পেটের ডান পাশে নিচের দিকে পাশাপাশি চারটি গুলির ছিদ্র ছিল। ওইদিন একই এলাকায় নিহত হন শান্ত নামের আরেক যুবক। তার পেটের ডানপাশের নিচে চারটি গুলি লেগেছিল। পাশাপাশি ডান ঊরুতে ছিল দুটি গুলির ছিদ্র। ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ী বউবাজার এলাকায় গান শট ইনজুরিতে নিহত হন হোটেল কর্মচারী আরিফ। গুলিতে তার মাথার মগজ বেরিয়ে যায়।
১৯ জুলাই কাজলা রোডে নিহত হন ইলেকট্রিক দোকানের কর্মচারী রবিউল ইসলাম ফরাজী। তার পেটের ডান পাশে গুলি লেগেছিল। তিনি আটরশি পিরের সমর্থক ছিলেন। ওইদিন দনিয়া কলেজের সামনে গুলিতে নিহত হয়েছেন রোহন খান। তার বুকের মাঝখানে ও পিঠের বামপাশে একটি করে ছিদ্র ছিল। তিনি দনিয়া কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা সুলতান আহমেদ খান একজন মুদি দোকানদার।
নামাজের জন্য বের হয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ২০ জুলাই গোপীবাগ রেলগেট এলাকায় নিহত হন পাঠাও ফুড ডেলিভারি বয় সোহাগ। তার বুকে গুলি লেগেছিল। ওইদিন শনির আখড়ায় নিহত হন আরিফ নামের এক ব্যক্তি। পেটে গুলিবিদ্ধ সবুজ পেশায় রিকশাচালক। মাঝেমধ্যে মাটি কেটেও জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। একই দিন একই এলাকায় বুকে গুলিবিদ্ধ হন ইউসুফ মিয়া সানোয়ার। তিনি বাংলাবাজার এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি করতেন। শনির আখড়া ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পারের সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
২০ জুলাই শনির আখড়ায় নিহত হন দোকান কর্মচারী ইউনুস আলী (১৬)। বুকে গুলিবিদ্ধ ইউনুস পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার পর শনির আখড়া এলাকায় দোকান কর্মচারী হিসাবে কাজ করছিল। এদিন শনির আখড়া ব্রিজের নিচে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সিএনজিচালক হাবিব। রায়েরবাগে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন দর্জি নাসির হোসেন। ঘটনার দিন বাসায় বিদ্যুৎ না থাকায় প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার জন্য বাসার নিচে নামলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
ওইদিন রায়েরবাগ দুইতারা মসজিদের সামনে গুলিবিদ্ধ হন জিসান। তিনি ভ্যানে করে ফিল্টারের পানি বিক্রি করতেন। ২১ জুলাই রায়েরবাগ ব্রিজের নিচে নিহত হন সাজেদুর রহমান অমর। তার মাথার ওপর এবং পেছনে গুলি লেগেছিল। তিনি ছিলেন ডিস লাইন দোকানের কর্মচারী ও বিএনপির কর্মী। একই দিন শনির আখড়ায় নিহত হন ১৭ বছর বয়সি ইয়াছিন শেখ। তার বুকের বাম পাশে, নাভির উভয় পাশে এবং পিঠের বাম পাশে গুলির ছিদ্র ছিল। তিনি গ্যাস সিলিন্ডার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। এদিন রায়েরবাগ ব্রিজের নিচে নিহত হন রায়েরবাগ মাদ্রাসার ছাত্র মাঈন উদ্দিন। সুরতহালের সময় তার গলার পাশে একটি সেলাই ও বুকের বামপাশে তিনটি সেলাই দেখা যায়।
২০ জুলাই পল্টনের বটতলার গুলিতে নিহত হন কামাল মিয়া। তার পিঠের বাম পাশে গুলি লেগেছিল। রিকশাচালক কামালের ছেলে মালিবাগ শেখ জুল উদ্দিন মাদ্রাসায় পড়ে। ছেলের জন্য খাবার নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
এদিন পল্টন মোড়ে নিহত হন ফার্মেসি ব্যবসায়ী রাব্বি আলম পাভেল ওরফে গোলাম রাব্বি। ওইদিন কাকরাইল-শন্তিনগর এলাকায় বুলেট ইনজুরিতে নিহত হন নবীন তালুকদার। তার মাথার পেছনে রক্তাক্ত গুলির জখম ছিল। তিনি যাত্রাবাড়ীতে মুদি দোকানদারি করতেন। ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নিহত হন সবুজ আলী। তিনি ঢাকা কলেজের চতুর্থবর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
২০ জুলাই নিউমার্কেট বিআইএসের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়। এদিন মতিঝিল জিনাত টাওয়ার এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আনসার সদস্য জুয়েল শেখ। কদমতলী থানার সামনে নিহত হন রাজিব হোসাইন। তিনি পেশায় সিএনজিচালক হলেও থানার সোর্স হিসাবে কাজ করতেন। ওই দিন কদমতলীর রায়েরবাগে নিহত হন দোকান কর্মচারী মোবারক। তার কপালের বাম পাশে গুলির চিহ্ন ছিল।
২১ জুলাই কদমতলী মেরাজনগর বি ব্লক শাহী মসজিদ এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় আহত হন যুবদল কর্মী মাসুদ। পরে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ২০ জুলাই কদমতলীর লালপুরে নিহত হন সোহেল নামের এক ব্যক্তি। তার বুকে ছিল গুলির চিহ্ন। তিনি পেশায় মোবাইল মেকানিক ছিলেন। এ ছাড়া বনানী সাততলা বস্তি এলাকায় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন রিকশাচালক আলামিন রনি। ১৯ জুলাই মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে গান শট ইনজুরিতে নিহত হন রিকশাচালক গনি মিয়া। এদিন মহাখালী কাঁচাবাজার এলাকায় গুলিতে নিহত হন শাহজাহান নামের এক ব্যক্তি। নিহত হওয়ার ১৫ দিন আগে তিনি একটি কার্টন ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। ওইদিন মোহাম্মদপুর ক্লাব মাঠে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নিহত হয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রকিব হাসান (১২)।
২০ জুলাই মোহাম্মদপুর বছিলা ব্রিজ এলাকায় গান শট ইনজুরিতে নিহত হন মিষ্টি দোকানের কারিগর শাকিল। ওইদিন ওই এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তেলের পাম্পের কর্মী মনসুর। এদিন রায়ের বাজার এলাকায় গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় জুতা কারখানার শ্রমিক ইসমাইল (১৭)। সে নানির বাড়িতে বেড়াতে এসে গুলিবিদ্ধ হয়। ২৬ জুলাই মিরপুর পিওএম পুলিশ লাইন্সের বিপরীতে নিজ বাসায় বুলেট ইনজুরিতে নিহত হয় ১১ বছর বয়সি শাফকাত শামির। সে নিজ বাসায় জানালার কাছে গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশকে অবগত করা ছাড়াই ওই শিশুর লাশ দাফন করা হয়। ২০ জুলাই মিরপুর ১৩ নম্বর মসজিদের সামনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গার্মেন্ট শ্রমিক কবির হোসেন। ২১ জুলাই প্রগতি সরণিতে বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল্লাহ আল আবির।
১৯ জুলাই ভাটারার বাশতরা নামক স্থানে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মনির হোসেন। তিনি পেশায় প্রাইভেট ফার্মের কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক মনির ঘটনার দিন ফটোকপি করতে অফিস থেকে বের হয়েছিলেন। ওইদিন একই এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হোটেল সিক্স সিজনের প্লাম্বার গণি শেখ। হোটেলে যাওয়ার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওইদিন একই এলাকায় গান শট ইনজুরিতে নিহত হন আব্দুল হান্নান। তিনি বেকারি দোকানের কর্মচারী ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এদিন সূত্রাপুরের লক্ষ্মীবাজারে গুলিতে নিহত হন কবি নজরুল ইসলাম কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র ইকরামুল হোসেন কাউসার। তিনি ছাত্রশিবিরের সমর্থক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
২১ জুলাই লক্ষ্মীবাজারে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কবি নজরুল কলেজের ছাত্র ওমর ফারুক। ১৯ জুলাই উত্তর বাড্ডা হোসেন মার্কেটের সামনে নিহত হন লিটন নামের এক ঠিকাদার। ১৮ জুলাই মেরুল বাড্ডায় নিহত হন দশম শ্রেণির ছাত্র আহাদুল। তার বাবা মুদি দোকানদার। তিন ভাই দিনমজুর। উৎসুক জনতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ২১ জুলাই বাড্ডার কানাডা ইউনিভার্সিটির সামনে নিহত হন হাসান। এবার তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
১৯ জুলাই বাড্ডার বৌদ্ধ মন্দির এলাকার নিজ বাসার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তৌফিকুল ইসলাম। তিনি পেট্রোল পাম্পে চাকরি করতেন। কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন। তার বাবা সাবেক সেনা সদস্য। ২১ জুলাই বুক ও পিঠে অসংখ্য ছররা গুলিবিদ্ধ হয়ে আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় নিহত হন আজিমপুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র খালিদ। আসর নামাজ শেষে হাঁটাহাঁটির সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওইদিন আজিমপুর কলোনির সামনে হাত, পা এবং পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ব্যাংক কর্মকর্তা দুলাল।
তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহকারী ম্যানেজার ছিলেন। জন্মদিনের কেক আনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এদিন নিউমার্কেট এক নম্বর গেটের বিপরীত পাশে নিহত হন পাপোশ বিক্রেতা আলী হোসেন। একই দিন নিউমার্কেট এলাকায় নিহত হন আব্দুল ওয়াদুদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি টেইলারিং দোকানে কাজ করতেন। পাশাপাশি তাবলিগ জামাতের দাওয়াত দিতেন। জুমার নামাজের পর তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
২১ জুলাই কলাবাগানের কাঁঠাল বাগান এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মোবারক। আওয়ামী লীগ সমর্থক মোবারক নিজের গরুর খামার দেখাশোনা করতেন। এদিন ধানমন্ডি গ্রীন রোড এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান প্রাইভেটকার চালক টিটু। ২২ জুলাই বারিধারা জেনারেল হাসপাতালের সামনে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নিহত হন হকার বাকের মোল্লা। তিনি ভ্যানে কাপড় বিক্রি করতেন। ১৯ জুলাই শাহজাদপুর সুবাস্তু নজরভ্যালির সামনে মারা যান মুরগির দোকানের কর্মচারী ওয়াসিম। তার মাথা ছিল থ্যাঁতলানো অবস্থায়।
২১ জুলাই রামপুরা এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সেলসম্যান সোহাগ। এদিন রামপুরা পুলিশ বক্সের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মারুফ হোসেন। তিনি কাজিরহাট ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ঘটনার দিনে মামার সঙ্গে কলেজে যাওয়ার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওইদিন রামপুরা আফতাবনগর গেটের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারী রাকিব হোসাইন। ১৯ জুলাই রামপুরার মৌলভীরটেক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান প্রাইভেটকার চালক সোহেল রানা। ২১ জুলাই রামপুরা সি ব্লকে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় সিএনজি ওয়ার্কশপ শ্রমিক ইফতি (১৬)। ঘটনার দিন বন্ধুদের সঙ্গে গোসল শেষে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয় সে। ২২ জুলাই একই এলাকায় গুলিতে নিহত হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ জাবের। ১৮ জুলাই মিরপুর স্টেডিয়াম ৫ নম্বর গেটের সামনে নিহত হন এইচএসসি পরীক্ষার্থী শাহরিয়াম বিন মতিন। ২০ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় নিহত হন হকার কামরুল ইসলাম।
২১ জুলাই মিরপুর ১০ এলাকার তালেব স্কুলের সামনে বাম হাতে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হন আকরাম খান রাব্বি। তিনি মিরপুর স্টেডিয়ামের একটি দোকানের ম্যানেজার ছিলেন। উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে ১ জুলাই মাথায় গুলিতে অজ্ঞাত ব্যক্তি নিহত হন। উত্তরা আজমপুর এলাকায় ১৯ জুলাই মো. আমিরুল ইসলাম মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তিনি আজমপুর মাজার রোডে ফল বিক্রি করতেন। উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় ১৯ জুলাই অজ্ঞাত ব্যক্তি নিহত হন। ২২ জুলাই উত্তরা ৭নং সেক্টর থেকে আসা রবিউল ইসলামকে (২২) মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি একটি বাসায় কেয়ারটেকারের কাজ করতেন। খিলগাঁও ফরাজী হাসপাতালের সামনে ১৯ জুলাই পুলিশের ইন্সপেক্টর মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া নিহত হন। তার মাথায় ও শরীরে আঘাতে চিহ্ন ছিল। তিনি পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলায় কর্মরত ছিলেন।
১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীর দনিয়া রসুলপুর এলাকায় ইমাম হোসাইন তায়িম (১৯) পেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি নারায়ণগঞ্জের আদমজী কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই দিন কদমতলীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ইমন (২৬) বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সে কদমতলীর হাসেম ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। ২০ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার মহাসড়কের ওপর অজ্ঞাতনামা (৫০) ব্যক্তির মৃত্যু হয়। একই এলাকায় ওইদিন আরও এক অজ্ঞাত (৪০) ব্যক্তির মাথায় গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রামপুরা এলাকায় ১৯ জুলাই বাসার জানালায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হাসিব আহসান সুজন (৪৮)। তার নাক ও চোখে গুলির চিহ্ন ছিল। ২২ জুলাই আদাবরের মুনসুরাবাদ এলাকায় মো. ইব্রাহিম (৩৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
১৯ জুলাই উত্তরা জনপথ রোডে জুয়েল মোল্লা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত বডিগার্ড হিসাবে পরিচিত। কাজলা দনিয়া এলাকায় মো. সাকিব হাসান নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ধানমন্ডি ল্যাবএইডের পাশে মো. রোমান (২৭), মিরপুর গোলচত্বর এলাকায় মমিনুল ইসলাম হৃদয় ও মো. বাবুল নামে পৃথক দুই ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেছে। ধানমন্ডির সাতরাস্তার ঢাকা সিএনজি পাম্পের গলিতে মো. আহসান হাবীব তামীম (২০) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। মহাখালী ফ্লাইওভারে মো. ইমাম মেহেদী হাসান (২১) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়। এছাড়া শাহরিয়ার হোসেন রোকন (২৩) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। উত্তরা এলাকায় আসিফ হোসেনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ফাইয়াজ (১৭) নামে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।