সাবেক আইজিপি বেনজীর, স্ত্রী ও দুই মেয়ে
৪৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পেয়েছে দুদক
হাইকোর্টে দুদকের প্রতিবেদন : আজ শুনানি
আলমগীর হোসেন
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে ৪৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। রোববার হাইকোর্টে জমা দেওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি রোববার এফিডেভিট করে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়েছে। সোমবার প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান যুগান্তরকে বলেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে, যা সোমবার আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ এপ্রিল পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়ে দুই মাস পর হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে দুদককে বলা হয়। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
প্রতিবেদনটি অনুসন্ধান করেন দুদকের উপপরিচালক (অনুঃ ও তদন্ত-১) মো. হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (বিশেষ তদন্ত-২) মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী, দুদকের সহকারী পরিচালক (বিশেষ তদন্ত-১) মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের নামে মোট ৯ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৫ টাকা, স্ত্রী জীশান মির্জার নামে মোট ২১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৩ টাকা, জ্যেষ্ঠ কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে আট কোটি ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৬ টাকা এবং মেজো মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে মোট চার কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য যে, স্থাবর সম্পদের দলিলে প্রদর্শিত মূল্য এখানে বিবেচনায় নেওয়া হয়।
এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের নামে বান্দরবান পার্বত্য সদর উপজেলাস্থ ৩৯৪ নং সূয়ালক মৌজায় ২৫ একর জমি লিজ গ্রহণ করেন। বেনজীর ও তার স্ত্রীর নামে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার দোশরপাড়া ও বালুচর মৌজার ধলেশ্বরী সমবায় সমিতি লি.-এর একটি করে মোট দুটি প্লট জমির পরিমাণ ১৪ কাঠা, রয়েছে। স্ত্রী জীশান মির্জার মালিকাধীন উত্তরা ১১নং সেক্টরে তিন কাঠা জমিতে সাততলা বাড়ি রয়েছে এবং স্ত্রী জীশান মির্জার নামে আদাবর পিসি কালসার হাউজিং সোসাইটি এলাকার ৯নং রোডের ৫৩ নং বাড়িটির ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে। কিন্তু এসব সম্পদের মূল্য কোথাও উল্লেখ নেই।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। তবে যাচাই অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ প্রকৌশলী/বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিমাপ গ্রহণপূর্বক মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে উল্লিখিত সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মূল্য আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত সম্পদের তথ্য ছাড়াও অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের নামে বেনামে দেশে-বিদেশে আরও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির সুপারিশসহ গত ৩০ জুন এই অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
হাইকোর্টে জমা প্রতিবেদনের সঙ্গে বিচারিক আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য সংযুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, বান্দরবান ও গাজীপুরে নামে-বেনামে বিভিন্ন সম্পদের তথ্য পায় সংস্থাটি। এরপর থেকে ধারণা করা হয়, বিপুল অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন বেনজীর। বেনজীরের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ২২ এপ্রিল কমিটি গঠন করে দুদক। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে গত ২৩ এপ্রিল থেকে টাকা সরাতে শুরু করেন সাবেক এই আইজিপি। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা তোলেন বেনজীর, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন দফায় সাবেক আইজিপির প্রায় ৭০০ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জব্দ রয়েছে ১২টি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাংক হিসাবসহ বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে আরও সম্পত্তি থাকতে পারে বলে ধারণা দুদকের। সংস্থাটির আইনজীবী বলছেন, এ বিষয়ে শিগগিরই মামলার সিদ্ধান্ত আসবে।