পিএসসির প্রশ্নফাঁস: ফেঁসে যাচ্ছেন চক্রের কাছে ভাড়া দেওয়া ফ্ল্যাট মালিকরাও
তদন্তে বেরিয়ে আসছে আরও নতুন নাম * তিন কর্মকর্তাসহ ১০ জনের রিমান্ড শুনানি আজ * কোচিং ব্যবসায় জড়িত চারজনকে পিএসসির শোকজ
ইকবাল হাসান ফরিদ
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন-পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রের আশ্রয়দাতাদেরও আইনের আওতায় আনতে চায় সিআইডি। পাশাপাশি যেসব ভবনে ফ্ল্যাট ভাড়া করে প্রার্থীদের পড়ানো হয়েছে সেসব ফ্ল্যাট মালিকরাও নিজেদের দায় এড়াতে পারেন না। তাই তাদেরও আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়েও কঠোর হচ্ছে পিএসসি। আরও চারজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এদিকে সিআইডির তদন্তে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে চক্রের নতুন নতুন সদস্যের নাম। তাদেরও আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কারাগারে থাকা পিএসসির তিন কর্মকর্তাসহ ১০ জনের রিমান্ড শুনানি হবে আজ মঙ্গলবার। এর আগে ১১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) তাদের প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে সিআইডি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রশ্নফাঁসের পর এর উত্তরসহ প্রার্থীদের যেসব ফ্ল্যাটে জড়ো করে পড়ানো হয়েছে, চক্রের ভাষায় এসব ফ্ল্যাটকে বুথ বলে। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে এ পর্যন্ত পাঁচটি বুথের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরে একটি, শেওড়াপাড়ায় একটি, ফকিরাপুলে একটি, গুলশানে একটি ও সাভার রেডিও কলোনিতে একটি রয়েছে।
প্রশ্নফাঁসে জড়িত ১৭ জন গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী জানিয়েছে, সাভার রেডিও কলোনির ফ্ল্যাটটি তিন দিনের জন্য ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া আরও বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীদের পড়ানোর জন্য বুথ ভাড়া করা হয়েছে বিভিন্ন সময়। তিন দিন থেকে এক সপ্তাহের জন্য ভাড়া নেওয়া হতো এসব বাসা। প্রতিটিতে ৬০ থেকে ৭০ জন করে প্রার্থী জড়ো করা হতো। বিনিময়ে ফ্ল্যাটের মালিককে দেওয়া হতো মাসিক ভাড়ার তিন থেকে চারগুণ টাকা। যেসব মালিক তিন দিন কিংবা সাত দিনের জন্য এসব ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছেন, তারা ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করেননি। সংশ্লিষ্ট থানাকেও এ ব্যাপারে অবহিত করেননি। সূত্র বলছে, এসব ফ্ল্যাট মালিকরাও কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না।
সিআইডি জানিয়েছে, কারাগারে থাকা পিএসসির তিন কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে রিমান্ডে পেলেও গা-ঢাকা দেওয়া ১৪ আসামিকে গ্রেফতার করা হলে বেরিয়ে আসতে পারে অনেক প্রভাবশালীর নাম।
জানা গেছে, অনেকটা নিরবচ্ছিন্নভাবে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি। তদন্তের স্বার্থে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনই গণমাধ্যমের সামনে আনছে না। সোমবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমাসহ সিআইডির একটি দল বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন-পিএসসিতে যান।
তারা পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন। কথা বলেন পিএসসির সদস্যসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, প্রশ্নের পাণ্ডুলিপি যে রুমে রাখা হয় সেই রুম ও যে রুমে প্রশ্ন মডারেশন করা হয় সেই রুমও ঘুরে দেখেন সিআইডি কর্মকর্তারা। বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন পিএসসির পরিচালক জনসংযোগ মতিউর রহমান।
পিএসসির যেসব কর্মকর্তা কোচিং ব্যবসায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কোচিং ব্যবসায় জড়িত আরও চারজনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে পিএসসি। তারা হলেন পিএসসির প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইন ও মো. শাহাবুদ্দিন, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম ও রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. মনিরুল ইসলাম।
পিএসসি সূত্র বলছে, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসাবে চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোচিং ব্যবসায় যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এর আগে রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে পিএসসির দুই উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত ও তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশনাও দিয়েছে পিএসসি। এছাড়া এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পিএসসি।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে পিএসসির উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির কোচিং ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। ঢাকার মালিবাগের জ্যোতি কমার্শিয়াল কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবু জাফর। কোচিং সেন্টারটি তার স্ত্রী জ্যোতির নামে। আর আলমগীর কবিরের কোচিং সেন্টারটি রাজধানীর মিরপুরে।
পিএসসি সূত্র জানায়, চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, আপনি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়েছেন, যা দাপ্তরিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি। এরূপ আচরণের জন্য বিধি অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে পত্র প্রাপ্তির ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হলো।