ফাঁস হওয়া প্রশ্নে চাকরি বগুড়ায়
জেমস ও মামুনের হাত ধরে শতাধিক ব্যক্তির চাকরি
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার ১৭ জনের মধ্যে দুজন বগুড়ার গাবতলীর নিয়ামুল হাসান জেমস ও মামুনুর রশিদ। তারা প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন কোটায় আত্মীয়স্বজন ছাড়াও শতাধিক ব্যক্তিকে চাকরি দিয়েছেন। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা ও জমি লিখে নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বিপ্লব গত বছর ১২ জুন দুদক বগুড়া কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
দুদক বগুড়া কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর তিন সদস্যের কমিটির কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছিল। উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, অভিযোগটি দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। অভিযুক্ত দুজন হলেন-গাবতলী উপজেলার নারুয়ামালা ইউনিয়নের উত্তর দোয়ারপাড়ার মৃত আবদুল গফুর মন্ডলের ছেলে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনিশিয়ান নিয়ামুল হাসান জেসম এবং একই উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়নের বাইগুনি মন্ডলপাড়ার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক মামুনুর রশিদ। আগে জেমস পিএসসিতে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করলেও পরে তিনি চাকরিচ্যুত হন। অভিযোগকারী আবদুল গফুর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তখন পিএসসির অব্যাহতিপ্রাপ্ত কর্মচারী নিয়ামুল হাসান বগুড়ার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে শতাধিক ব্যক্তিকে ভুয়া প্রতিবন্ধী কার্ড তৈরি করে দেন। তাদের প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরির ব্যবস্থা করে রাষ্ট্রের ক্ষতি ও প্রকৃত প্রতিবন্ধীদের বঞ্চিত করেছেন। জেমস তার স্ত্রী মৌসুমীকে আসল ঠিকানা গোপন করে ঢাকা জেলা কোটায় কাস্টমসে চাকরি দেন। গাবতলী দোয়ারপাড়া গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে পলাশের জমি নিজ ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের নামে লিখে নিয়েছেন। জেমস ২০১৫ সালে মেঘনা ব্যাংক ও ডাচ্বাংলা ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা করেছেন। যা তদন্ত করলে সত্যতা মিলবে।
উত্তর দোয়ারপাড়ার বাড়িতে গেলে বগুড়া গণপূর্ত বিভাগের কর্মরত বোন জেলি খাতুন তার ভাই জেমস সম্পর্ক কিছুই জানেন না বলে জানান। চাচা আবদুল কুদ্দুস মন্ডল জানান, এলাকায় জেমসের অনেক সম্পত্তি আছে। তাই তাদের অবৈধভাবে চাকরি প্রদান ও টাকা-জমি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। গ্রামবাসী জানান, জেমস এলাকায় অন্তত ১৩ বিঘা জমি কিনেছেন। প্রতিবেশীরা জানান, জেসম ও মামুনুর রশিদ সম্পর্কে মামাতো এবং ফুফাতো ভাই। মামুনুর রশিদকে পাসপোর্ট অফিসে চাকরি দিয়েছেন জেমসই। পরে জেমস তাকে ড্রাইভার আবেদ আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর মামুনুর রশিদ বাইগুনি ও বাওইটুনা গ্রামের অন্তত ১৯ জনকে সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ে চাকরি দিয়েছেন। বিনিময়ে একেকজনের কাছ থেকে ১৫-২০ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। মামুনুর রশিদ নিজ এলাকায় কোনো সম্পদ না গড়লেও বাবা মোস্তাফিজুর রহমানের নামে বাইগুনি গ্রামে পাঁচ বিঘা জমি কিনেছেন। শ্বশুরবাড়ি দাড়াইল বাজার গ্রামে গরুর খামারসহ অনেক জমিজমা করেছেন। খামারে ২৫টি গরু থাকলেও সেখান থেকে অন্তত ১৫টি গরু অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন।