Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এমপি আনার হত্যা

ডিএনএ নমুনা দিতে কালক্ষেপণ

‘উনারা আসবেন কি আসবেন না এ বিষয়ে রেসপন্স করছেন না’ -কলকাতা সিআইডি * তদন্তে আনার হত্যায় জড়িত আরও অনেকের নাম পেয়েছে ডিবি

Icon

ইমন রহমান

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডিএনএ নমুনা দিতে কালক্ষেপণ

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ২ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের এক ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে দেড় মাস আগে উদ্ধার করা হয়েছে মাংসের টুকরো টুকরো অংশ।

ওই মাংস এমপি আনারের কিনা-তা নিশ্চিত হতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড) নমুনা মেলানোর উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা সিআইডি।

ইতোমধ্যে সিআইডির প্রতিনিধিদল এমপি আনারের মেয়ে ডরিনকে ফোন করে ডেকেছে। তবে সে ডাকে সাড়া না দেওয়ায় কলকাতা সিআইডি সরকারিভাবে নোটিশও পাঠিয়েছে। এরপরও কলকাতায় যাচ্ছেন না আনারের পরিবারের সদস্যরা। ফলে থমকে আছে হত্যা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া।

কলকাতা সিআইডির দাবি-‘উনারা আসবেন কি আসবেন না এ বিষয়ে রেসপন্স করছেন না।’ এর ফলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্তেও ব্যাঘাত ঘটছে।

কিন্তু আনারের স্বজনদের পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয় ডিএনএ নমুনা দিতে ৩ জুলাই তারা কলকাতা যাবেন। কিন্তু তারা কেউই যাননি। কারণ হিসাবে বলছেন কলকাতা সিআইডির পক্ষ থেকে তাদের চূড়ান্ত ভাবে ডাকা হয়নি।

আনার হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে কলকাতা সিআইডি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কৌশিক যুগান্তরকে বলেন, ডিএনএ নমুনা দেওয়ার জন্য উনাদের (এমপি আনারের পরিবারের সদস্য) আমরা ডেকেছি। এখান থেকে আমাদের সরকারি চিঠিও গেছে। উনারা আসবেন কি আসবেন না এ বিষয়ে কোনো রেসপন্স করছেন না। আমাদের দিক থেকে চাইছি তাড়াতাড়ি আসুক। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবেও কোনো যোগাযোগ করেননি। এটা দুটি দেশের বিষয়। তারা আমাদের জানাবে। কিন্তু কিছু জানাচ্ছেন না। তাদের জরুরি আসা দরকার।

এর আগে আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ যুগান্তরকে জানান, আদালতের অনুমোদন পেলে কলকাতার সিআইডি জানাবে। এরপরই আনারের মেয়ে ডরিনসহ পরিবারের তিন সদস্য কলকাতা যাবেন ডিএনএ নমুনা দিতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এটা ভুল কথা। আমরা তো নোটিশ করে আসতেই বলেছি। আসলেই তো আদালতের অনুমোদন। আদালতে তো উনাদের যেতে হবে। উনারা না এলে অনুমোদন পাবেন কিভাবে। আদালত উনাদের মতামত নেবেন, আমাদের না। এজন্য আমরা চাই তাড়াতাড়ি আসুক। আমরা সরকারি নথি পাঠিয়ে দিয়েছি আসার জন্য। সরকারি ভাবে তাদের কাছে পৌঁছেছে। উনারা কেন দেরি করছেন বুঝতে পারছি না।

কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার মাংসের টুকরো থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা গিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার রিপোর্ট এখনো আমরা পাইনি। আনারের মাংস কিমা করা মেশিন উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইনভেস্টিগেশন এখন চলমান আছে। এ বিষয়ে এখন কিছু বলা যাবে না।

আনার অপহরণ মামলা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে শনিবার বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করতে গিয়ে এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের মধ্যে ছয়জনই বিজ্ঞ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ভারতে দুজন গ্রেফতার আছে। আমরা অযথা কাউকে ডাকাডাকি করছি না, হয়রানি করছি না। আবার যে যতবড় নেতাই হোক এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই আমরা ছাড় দিচ্ছি না। আমরা মনে করি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করতে পেরেছি। তদন্তে আরও অনেক নাম আমরা পেয়েছি। সবকিছু মিলেই তদন্ত করছি। জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন তিন আসামি। এ বিষয়টি তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাবে কিনা জানতে চাইলে ডিবির হারুন বলেন, এটা আদালতের বিষয়। যে কেউই আদালতে আবেদন করতে পারেন। এটা আদালত গ্রহণও করতে পারেন আবার বাতিলও করতে পারেন। আমি মনে করি এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না।

এমপি আনার ১২ মে ভারতে যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে ডরিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়। তদন্ত চলাকালে ৯ জুন কলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার একটি খাল থেকে কিছু হাড় উদ্ধার করে সিআইডি। ধারণা করা হয় হাড়গুলো এমপি আনারের। এর আগে ২৮ মে কলাকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে আনারের শরীরের টুকরো টুকরো মাংস উদ্ধার করা হয়। এসব হাড় ও মাংস এমপি আনারের কিনা তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় কলকাতা সিআইডি।

এমপি আনার হত্যার ঘটনায় দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে নয়জনকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন বাংলাদেশে গ্রেফতার শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর, সেলেস্তি, ফয়সাল, মোস্তাফিজ, গ্যাস বাবু ও মিন্টু। এছাড়া ভারতে গ্রেফতার আছে সিয়াম ও কসাই জাহিদ। এছাড়া আরও তিনজনের নাম এসেছে, যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়। তারা হলেন, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া, তাজ মোহাম্মদ খান ও জামাল হোসেন। তবে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে তারা ব্যবহৃত হতে পারে বলে ডিবির সন্দেহ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম