Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষাণ্মাসিক পরীক্ষা

নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

প্রশ্নফাঁস বন্ধ না হলে মেধাবীরা পরীক্ষা দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে-অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি * মানসম্মত হচ্ছে না পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, মিল নেই পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে

Icon

হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের ষাণ্মাসিক (অর্ধবার্ষিক) পরীক্ষার মূল্যায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। ৩ জুলাই থেকে শুরু হয় এ মূল্যায়ন, যা চলবে ৩ আগস্ট পর্যন্ত। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত এ পরীক্ষার নাম ‘ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন’। মূল্যায়নের প্রথম দিন থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগের রাতেই প্রশ্নফাঁস, বই দেখে পরীক্ষা দেওয়া, শিক্ষকরা উত্তরসহ সবকিছু বলে দেওয়া-এসব ঘটনা ছিল দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্র। এছাড়া পরীক্ষার হলে গল্পগুজব করে সময় পার করা, নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই পরীক্ষা শেষ হওয়া, অতি সহজ বিষয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করা, প্রশ্নের সঙ্গে পাঠবইয়ের মিল না থাকা, মানসম্মত প্রশ্নপত্র না হওয়া এবং পড়াশোনা না করে গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষায় উত্তর লেখার ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। ফলে কারিকুলাম ও মূল্যায়ন নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ, চলমান ষাণ্মাসিক মূল্যায়নে পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে প্রশ্নের কোনো মিল নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা বাসায় পড়াশোনা করতে আগ্রহ দেখায় না। তাদের মধ্যে কোনো পরীক্ষার ভয়ভীতি নেই। মূল্যায়নে কার্যক্রমভিত্তিক ৩৫ শতাংশ নম্বর রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ শিক্ষকদের হাতে। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে একধরনের জিম্মি। আর ৬৫ শতাংশ মূল্যায়ন লিখিত পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে পরীক্ষায় উত্তর লিখতে গিয়ে একেক শিক্ষকের কাছে মূল্যায়ন একেক রকম হবে। ফলে মূল্যায়নে তৈরি হবে বৈষম্য। এছাড়া চলমান পরীক্ষা শেষ হলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাসায় পড়ার আগ্রহও হারিয়ে ফেলবে। এমন পরিস্থিতিতে সন্তানদের মেধাবী করার উপায় হারিয়ে ফেলছেন অভিভাবকরা। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না তাদের।

শিক্ষকরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষার শুরুর ঠিক দুদিন আগেই মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়। এ নিয়ে শিক্ষকদের কোনো প্রশিক্ষণব্যবস্থা ছিল না। বিষয়টি নতুন হওয়ায় সহজে বুঝে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের উদাসীনতার কারণে চলমান পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। মূল্যায়নের এ প্রশ্নপত্র কেন্দ্রীয়ভাবে এনসিটিবি তৈরি করে এবং প্রতিটি পরীক্ষার আগের রাতে ‘নৈপুণ্য’ অ্যাপের মাধ্যমে স্কুলপ্রধানের কাছে পাঠানো হয়। প্রধান শিক্ষক তার পাসওয়ার্ড দিয়ে সেই প্রশ্নপত্র ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করে শিক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল বা অনুন্নত গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশির ভাগ প্রধান শিক্ষক অনলাইনে খুব পারদর্শী নন। অনেকের কাছে ভালো মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের মতো ডিভাইসও নেই। ফলে স্টেশনে কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করছেন তারা।

এ সময়ও প্রশ্নফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এতে পরীক্ষার আগের দিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ছে।

পরীক্ষার শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিনদিন মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু তিনদিনই একাধিক শ্রেণির একাধিক বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত দুজন প্রধান শিক্ষককে চিহ্নিত করে শাস্তি দিয়েছে শিক্ষা বিভাগ। মঙ্গলবার তাদের বেতনভাতা স্থগিত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিনের কাছে নৈপুণ্য অ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের নবম শ্রেণির ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে একই দিনে অনুষ্ঠিত ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বিষয়ের পটুয়াখালী সদর উপজেলার ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেগম লুৎফুন্নেসার কাছে পাঠানো প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে।

বুধবার ছিল ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত, সপ্তম শ্রেণির বাংলা, অষ্টম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা এবং নবম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বিষয়ের পরীক্ষা। এসব বিষয়ের প্রশ্নপত্রও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমাধানসহ খবর বেরিয়েছে। বুধবার ইয়াসমিন নামে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে স্কুলের পরীক্ষার প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক বুধবার যুগান্তরকে বলেন, পরীক্ষার আগের রাতে পড়াশোনা না করে মেয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে সে মোবাইল ফোন লুকিয়ে ফেলে। পরে জানতে পারলাম তার বন্ধুরা অনলাইনে প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছে। সেই প্রশ্ন বাসায় সমাধান করে পরীক্ষার হলে যাবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নতুন কারিকুলামে সন্তানরা এমনিতেই পড়ার টেবিলে বসে না। এরপর যদি আগের রাতে প্রশ্নফাঁস হয়, তাহলে পড়াশোনার কী বাকি থাকল? আইডিয়াল স্কুলে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক যুগান্তরকে বলেন, বইয়ের সঙ্গে প্রশ্নের কোনো মিল নেই। ধর্ম শিক্ষা পরীক্ষায় বলা হয়েছে দুর্যোগ নিয়ে লিখতে। মুখস্থ বিষয় না থাকলে বই কেন দেওয়া হলো? নতুন কারিকুলামে টেক্সট বই থেকে কমপক্ষে ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল হক দুলু যুগান্তরকে বলেন, সরকারে কঠিন মনিটরিংয়ের অভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। পরীক্ষার আগে একের পর এক প্রশ্নফাঁস হওয়ায় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। প্রশ্নফাঁস বন্ধ না হলে মেধাবীরা পরীক্ষা দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিক্ষাব্যবস্থারও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন পুরোটাই হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর দক্ষতা ও যোগ্যতার ওপর। পুরো সময় সে কী শিখেছে, তার কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন হচ্ছে। ওই শিক্ষার্থী আসলে কী শিখেছে, তার পারদর্শিতার মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। বইয়ের সঙ্গে প্রশ্নের মিল থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। এ মূল্যায়নের প্রশ্ন ওপেন রাখার কথা ছিল। তাই শিক্ষার্থীরা আগের রাতে প্রশ্ন পেল নাকি পেল না, তাতে মূল্যায়নে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে প্রশ্নগুলো কীভাবে আগের রাতে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তা বন্ধের উপায় খোঁজা হচ্ছে। তবে পাবলিক পরীক্ষায় এ ধরনের বিষয় থাকবে না। কারণ, পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্ন পাঠানো হবে।

 
Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম