কারা অধিদপ্তরে ডিপ্লোমা নার্স-ফার্মাসিস্টদের হতাশা
সৃষ্টি হচ্ছে ১৮৯৯ পদ বিলুপ্ত ৬৪টি
বেশকিছু শর্ত দিয়েছে অর্থ বিভাগ * কারাগারে ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্টদের অনেক পদ খালি * নতুন পদ যুক্ত হলে জনবল হবে ১৩ হাজার
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কারা অধিদপ্তরের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য পাঁচ ধাপে এক হাজার ৮৯৯টি পদ সৃজন করা করা হবে। ২০০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে ২০২৮-২৯ অর্থবছরের মধ্যে এসব পদ সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫২২টি, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫৮০টি, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৪০৩, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ১৩৫ এবং ২০২৮-২৯ অর্থবছরে ২৫৯টি পদ সৃষ্টি করা হবে।
অপরদিকে তিন ধাপে ৬৪টি পদ বিলুপ্ত করা হবে। ২০২৬-২৭ অর্থবছর থেকে ২০২৮-২৯ অর্থবছরের মধ্যে এসব পদ বিলুপ্ত হবে। এর মধ্যে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৪৭, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে আট এবং ২০২৮-২৯ অর্থবছরে নয়টি পদ বিলুপ্ত করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুরক্ষা সেবা বিভাগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। সম্মতিপত্রে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে অর্থ বিভাগ। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে জানানো হয়। প্রস্তাবটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন শাখায় আছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, নতুন পদ সৃষ্টির খবরে সার্বিকভাবে কারা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মকর্তারা খুশি হলেও হতাশা তৈরি হয়েছে ডিপ্লোমা নার্স এবং ফার্মাসিস্টদের মধ্যে। সৃজনকৃত নার্সিং সুপারিন্টেনডেন্ট ও ডেপুটি নার্সিং সুপারিন্টেনডেন্ট পদ ঘিরে তাদের মধ্যে এই হতাশা। তাদের প্রত্যাশা ছিল, কারা অধিপ্তরের কর্মকর্তা হিসাবে পদোন্নতির মাধ্যমে ওই পদগুলোতে তারা আসাীন হবেন। কিন্তু সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এই দুটি পদ পূরণ করা হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের মেডিকেল ইউনিট থেকে পদায়নের মাধ্যমে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রেষণে নিয়োগের মাধ্যমে এই পদগুলো পূরণ করা যাবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিপ্লোমা নার্স এবং ফার্মাসিস্টরা বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন। সম্মতিপত্রে ২৯টি ডিপ্লোমা নার্স ও ১২টি ফার্মাসিস্টের পদ বিলুপ্ত করার বিষয়টি তারা মানতে পারছে না।
কয়েকজন ডিপ্লোমা নার্স এবং ফার্মাসিস্ট যুগান্তরকে বলেন, জননিরাপত্তা বিভাগের মেডিকেল টিম থেকে নার্সিং সুপারিন্টেনডেন্ট ও ডেপুটি নার্সিং সুপারিন্টেনডেন্ট পদে জনবল পদায়ন করার অর্থ হলো ডিপ্লোমা নার্স এবং ফার্মাসিস্টদের পদোন্নতি দেওয়া হবে না। কারা বিভাগে ডেপুটি জেলার হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি পর্যন্ত হচ্ছে। অথচ একই গ্রেডে নিয়োগ পাওয়ার পর ডিপ্লোমা নার্সরা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতিবঞ্চিত থাকার কারণে কারা বিভাগ থেকে প্রায় সময়েই ডিপ্লোমা নার্স এবং ফার্মাসিস্টরা চাকরি ছাড়ছেন। তাই এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ডিপ্লোমা নার্স এবং ফার্মাসিস্টদের অনেকগুলো পদ খালি রয়েছে।
কারা অধিদপ্তরের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, কারা অধিদপ্তরের অধীন সারা দেশে বাংলাদেশে জেলের জনবল ১১ হাজারের বেশি। সৃজনকৃত পদ যুক্ত হলে জনবল হবে প্রায় ১৩ হাজার। কারা সদর দপ্তরে বর্তমানে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পদ একটি। নতুন জনবল কাঠামো অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও দুজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে এই অর্থবছরে (প্রথম পর্যায়ে) সদর দপ্তরের জন্য পাঁচজন কারা উপমহাপরিদর্শক এবং ছয়জন অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ৫৪ জন লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। একই অর্থবছরে প্রিজন্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে ৬২, রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৭৪, নয়টি বিভাগীয় কার্যালয়ে ৫৯, কেরানীগঞ্জ মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬৬, হসপিটালাইজড প্রিজনার্স সিকিউরিটি ইউনিটে ১১২টি এবং কক্সবাজার জেলা কারাগার ও কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জন্য ৫৫টি পদ সৃষ্টি হচ্ছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে (২০২৫-২৬ অর্থবছরে) সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর জন্য ২২৬টি, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জন্য দুটি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জন্য নয়টি, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ ১০, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ১১, কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২৫ এবং ফেনী-১ মাদারীপুর-১ ও পিরোজপুর-১ জেলা কারাগারের জন্য ২৯৭টি পদ সৃষ্টি হচ্ছে। তৃতীয় পর্যায়ে (২০২৬-২৭ অর্থবছরে) রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের জন্য ২০, বি ক্যাটাগরির চারটি কেন্দ্রীয় কারাগারে (কাশিমপুর-১, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট-২) ৩১, ১৩টি জেলা কারাগারের (দিনাজপুর, খুলনা, ফরিদপুর, বগুড়া, পাবনা, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ) ১৯৮টি পদ সৃষ্টি হচ্ছে। একই সময়ে শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ-২, মাদারীপুর-২, বান্দরবান, রাজশাহী, খাগড়াছড়ি, ফেনী-২, পঞ্চগড়, মেহেরপুর, নড়াইল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুর-২ জেলার কারাগারের জন্য ১৫৪টি পদ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া তৃতীয় পর্যায়ে ৪৬টি পদ বিলুপ্ত হচ্ছে।
চতুর্থ পর্যায়ে (২০০৭-২৮) অর্থবছরে পটুয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, জামালপুর, সুনামগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলা কারাগার-বি এর জন্য ১৩৫টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। একই সময়ে আটটি পদ বিলুপ্ত করা হচ্ছে। পঞ্চম পর্যায়ে ১৫টি জেলা কারাগার-সি- গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নাটোর, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ভোলা, বরগুনা, শেরপুর এবং ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য ২৫৯টি পদ সৃষ্টি হচ্ছে। ওই সময়ে নয়টি পদ বিলুপ্ত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ বিভাগ হয়ে বাস্তবায়ন বিভাগে গিয়েছে। বাস্তবায়ন বিভাগের কাজ শেষ হয়ে সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসবে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।