Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছে না

তরুণীর খণ্ডিত লাশ শনাক্তে গলদঘর্ম তদন্ত সংস্থা

হত্যার পর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে তিন টুকরো করে লাশ ফেলা হয় সাভার, ধামরাই ও ফরিদপুরে * পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশ

Icon

ইকবাল হাসান ফরিদ

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তরুণীর খণ্ডিত লাশ শনাক্তে গলদঘর্ম তদন্ত সংস্থা

এক তরুণীর খণ্ডিত লাশের রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম হচ্ছে তদন্ত সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশের চৌকশ দুটি ইউনিট। ওই তরুণীকে হত্যার পর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে তিন খণ্ড করা হয়েছে দেহ। পরিচয় যাতে শনাক্ত না হয়, সেই লক্ষ্যে মুখ ও হাতের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর মরদেহের খণ্ডিত অংশ ফেলা হয়েছে ঢাকা ও ফরিদপুরের তিনটি স্থানে। সারা দেশে পোশাক কারখানায় তথ্য চেয়ে চিঠি, ঘটনার আগে-পরে বিভিন্ন থানার নিখোঁজ জিডি পর্যালোচনাসহ নানা কৌশল অবলম্বন করেও এ হত্যাকাণ্ডের কিনারা করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি সকালে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানাধীন কৈজুরী ইউনিয়নের বিলনালিয়া গ্রামের মাঠে একটি ব্রিফকেসে এক তরুণীর আগুনে পোড়ানো মাথাসহ একটি হাত পাওয়া যায়। একই দিন ঢাকা জেলার ধামরাই থানাধীন কুল্লা ইউনিয়নের বড় চন্দ্রাইল গ্রামে নাভির নিচ থেকে পা পর্যন্ত অংশ পাওয়া যায়। এরপর ৩১ জানুয়ারি সাভারের সাদাপুর নামক স্থানে একটি গার্মেন্টসের বর্জ্য অপসারণের ড্রেন থেকে একটি হাতসহ দেহের মাঝখানের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানা ও ঢাকা জেলার ধামরাই ও সাভার থানায় পৃথক তিনটি হত্যা মামলা করা হয়। খণ্ডিত অংশগুলো ময়নাতদন্তের পর ডিএনএ প্রোপাইল তৈরি করা হয়। ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত হয় তিন খণ্ড একই তরুণীর দেহাংশ। লোমহর্ষক এ হত্যার ঘটনায় সাভার ও ফরিদপুরে করা মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই ঢাকা জেলা ও ফরিদপুর জেলা ইউনিট। আর ধামরাই থানার মামলার তদন্ত শুরু করে সিআইডি ঢাকা জেলা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, খণ্ডিত অংশের ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে ওই তরুণীর দেহ তিন খণ্ড করা হয়েছে। এরপর গার্মেন্টসের প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত পলিথিনে মোড়ানো হয়েছে খণ্ডিত অংশগুলো। ওই তরুণী কোনো গার্মেন্টসকর্মী হতে পারে। ওই তরুণীর খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করার পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। কিন্তু হাতের আঙুলের চামড়া নষ্ট করে দেওয়ার কারণে ফিঙ্গার ম্যাচিং সম্ভব হয়নি। এখন ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে তদন্ত কাজ। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত হতে পারলেই রহস্য উদ্ঘাটন অনেকটা সহজ হবে।

জানা গেছে, ওই তরুণীর খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের আগের এবং পরের ১ মাসের বিভিন্ন থানার নিখোঁজ জিডি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তাছাড়া তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যেক কারখানায় চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাদের কোনো শ্রমিক নিখোঁজ আছে কি-না জানতে চেয়ে। এছাড়াও বেশকিছু কৌশল হাতে নিয়ে কাজ করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

পিবিআই ফরিদপুর জেলা ইউনিটের পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এখনও এ হত্যাকাণ্ডের কিনারা করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার সময়ে এবং এর আগে-পরে বিভিন্ন থানায় যেসব তরুণী নিখোঁজের ঘটনায় জিডি হয়েছিল এর মধ্যে বেশকিছু জিডি আমরা পর্যালোচনা করেছি। তিনি বলেন, তরুণীর মাথা এবং হাতের যে অংশটি পাওয়া গিয়েছিল, তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ায় চেহারা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের তদন্তকাজ অব্যাহত আছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শিরীন সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, আমরা তরুণীর কোমর থেকে পায়ের অংশ পেয়েছিলাম। যে কারণে তা শনাক্ত করতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন শিল্প এলাকায় এবং নদীপথের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই তরুণীর পরিচয় শনাক্তে কোনো কিনারা করা যাচ্ছে না। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

সাভারে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার এসআই মো. আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে জানান, তরুণীর পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গার্মেন্টসের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পরিচয় শনাক্ত করা গেলেই এর হত্যার পেছনে কারা জড়িত তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম