Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দেশীয় শিল্পে সুরক্ষা

পুরোনোতে কমেছে নতুনে নজর

Icon

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পুরোনোতে কমেছে নতুনে নজর

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর ছাড় কমিয়ে আনার শর্ত মানতে গিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় শিল্প ও বিনিয়োগে রেয়াতি সুবিধা ছাঁটাই করা হয়েছে। হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে।

আর আমদানি বিকল্প দেশীয় ইলেকট্রনিক্স শিল্পে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হার বাড়ানো হয়েছে। অবশ্য কার্পেটশিল্পের প্রধান কাঁচামাল পলিপ্রোপাইলিন ইয়ার্নের শুল্ক হ্রাস, সুইস-সকেট আমদানিতে ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি এবং মোবাইল ফোনের নতুন যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধার মাধ্যমে নতুন শিল্পকে সহায়তা করার চেষ্টা রয়েছে। শিল্পকারখানা স্থাপনের প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং স্ট্রাকচার। প্রস্তাবিত বাজেটে এ ধরনের স্থাপনার আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছে। এতে শিল্প স্থাপনের শুরুতেই খরচ বাড়বে উদ্যোক্তাদের।

এরপর শিল্পে প্রয়োজন বিদ্যুৎ সংযোগ। বাজেটে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্লান্ট, ইকুইপমেন্ট ও ইরেকশন ম্যাটেরিয়াল আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়বে। ফলে বাড়ানো হতে পারে বিদ্যুতের দাম। এছাড়া শিল্পের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট হার বাড়ানো হয়েছে। বাজেট বক্তৃতার ১২৫ পৃষ্ঠায় অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশীয় শিল্প বিকাশের চলমান গতিশীলতা রাখতে এসি উৎপাদনে স্থানীয় পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট এবং ফ্রিজ আমদানিতে ৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেন! খাতসংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, ভ্যাট হার বাড়ানোর ফলে দেশীয় শিল্পের গতিশীলতা আদৌ ধরে রাখা সম্ভব কিনা।

অন্যদিকে বাজেটে এসি-ফ্রিজ তৈরির প্রধান কাঁচামাল কম্প্রেসারকে রেয়াতি সুবিধার প্রজ্ঞাপনে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, কম্প্রেসার আমদানিতে ন্যূনতম মূল্য আরোপ করা হয়েছে। ফ্রিজের নন-ইনভার্টার কম্প্রেসার ৪০ ডলার, ইনভার্টার কম্প্রেসার ৬৫ ডলার, এসির নন-ইনভার্টার কম্প্রেসার ৫০ ডলার, ইনভার্টার কম্প্রেসারের ন্যূনতম মূল্য ৮৫ ডলার করা হয়েছে। অন্যদিকে এয়ারকন্ডিশন উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সব উপকরণের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এয়ারকন্ডিশন স্বল্প আয়ের জনগণ ব্যবহার করে না বিধায় কম্প্রেসার আমদানিতে রেয়াতি হার প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন। অথচ দেশীয় ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিগুলোর কল্যাণে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে এসি। তীব্র দাবদাহের হাত থেকে বাঁচতে গ্রামাঞ্চলের মানুষও এসি ব্যবহার করছে। একইভাবে ফ্রিজের কম্প্রেসার আমদানির শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে নিুআয়ের মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে ফ্রিজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠান কম্প্রেসার বানায়। সেই প্রতিষ্ঠানটিকে সুবিধা দিয়ে বাকি ১২টি প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে।

তথ্য বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিনিয়োগকে অর্থনৈতিক অঞ্চলমুখী করতে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল-হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করছে সরকার। সেই লক্ষ্যে কাজ করতে একাধিক বেসরকারি উদ্যোক্তা নিজ প্রচেষ্টায় বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে লাইসেন্স নিয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ডেভেলপারের ব্যবহৃত সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক বসানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অবশ্য বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রস্তাবিত বাজেটে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কর হার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, দেশের কর ব্যবস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার উন্নয়ন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী মনে করেন, এই কর ব্যবস্থার ফলে করদাতারা ব্যবসা-বাণিজ্যের যথাযথ পরিকল্পনা করতে পারবে।

কার্পেট উৎপাদন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল পলিপ্রোপাইলিন ইয়ার্নের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সুইস-সকেট উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে কাঁচামাল আমদানির শুল্ক হ্রাস এবং বিদেশ থেকে সুইস-সকেট আমদানির ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ফোনের নতুন যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধার মাধ্যমে নতুন শিল্পকে সহায়তা করার চেষ্টা রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম