বিবিএক্স’র জরিপ
ব্যবসার পরিবেশের অবনতি, ঋণপ্রাপ্তির জটিলতা বেড়েছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
২০২৩ সালে দেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা অর্থের প্রাপ্তি বা ঋণের প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে। এছাড়া ব্যবসা শুরুর সনদ গ্রহণ, জমির প্রাপ্যতা, অবকাঠামোসহ সাতটি সূচকের অবস্থা নিুমুখী। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশের ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) অফিসে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স) জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এমসিসিআই ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ এ জরিপ করেছে। জরিপের ফল তুলে ধরেন পলিসি এক্সচেঞ্জের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ।
বিবিক্স সম্পর্কে ড. মাসরুর রিয়াজ জানান, ১২টি খাতের ব্যবসায়ী ও মধ্যস্থতাকারীদের ওপর জরিপ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-কৃষি ও বনায়ন, নির্মাণ, ইলেকট্রনিকস ও হালকা প্রকৌশল, আর্থিক মধ্যস্থতাকারী, খাদ্য ও পানীয়, চামড়া ও ট্যানারি, ওষুধ ও রাসায়নিক, আবাসন, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, পরিবহণ, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা। এ খাতের ব্যবসাসংক্রান্ত ১১টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপ করা হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে ব্যবসা শুরু, জমির প্রাপ্যতা, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামো সুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, বাণিজ্য সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তি গ্রহণ, ঋণের প্রাপ্যতা এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান। পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান সূচকটি এবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবার সূচকগুলো অর্জিত পয়েন্ট হচ্ছে ৫৮ দশমিক ৭৫; যা আগের বছর ছিল ৬১ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। সবচেয়ে খারাপ করেছে ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. রিয়াজ বলেন, বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচক প্রকাশ করা হতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার ব্যবসা পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে। সেখানে বিশ্বব্যাংক ব্যবসায়ীদের সরাসরি মতামত নিত না, মধ্যস্থতাকারীদের মতামতের ভিত্তিতে জরিপ করা হতো। কিন্তু বিবিএক্স জরিপ করা হয়েছে দেশের সব বিভাগীয় শহরে ব্যবসায়ী ও মধ্যস্থতাকারীদের মতামতের ওপর ভিত্তিতে।
অনুষ্ঠানে এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। আলোচনায় অংশ নেন জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ উজি এন্ডো, ফরেন ইনভেস্টর চেম্বারের (ফিকি) সভাপতি জাবেদ আকতার।
স্বাগত বক্তব্যে কামরান টি রহমান বলেন, দেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে বোঝার জন্য এ জরিপ করা হয়েছে। কোন খাতে কেমন নীতি গ্রহণ করা দরকার, সে বিষয়ে ধারণা দিতে এই জরিপ।
জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ উজি এন্ডো বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসারত ৬২ শতাংশ কোম্পানি পুনরায় বিনিয়োগে আগ্রহী। যদিও বাংলাদেশের ব্যবসার কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। কোম্পানি নিবন্ধন ও নাম ক্লিয়ারেন্সে কিছু সমস্যা আছে। বিশ্বখ্যাত গাড়ির ব্র্যান্ড টয়োটার নামেও বাংলাদেশে কোম্পানি নিবন্ধন নেওয়া আছে। আবার বিনিয়োগকারীদের ভিসাসংক্রান্ত ইস্যু আছে। এগুলো দূর করতে পারলে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হবে।
ফিকির সভাপতি জাবেদ আকতার বলেন, বাংলাদেশের একটি ব্যবসা শুরু করতে ১৫০ ধরনের সনদ লাগে। এজন্য ২৩টি সরকারি দপ্তরে যেতে হয়। মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্য দেশে কোম্পানি নিবন্ধনে সময় কম লাগায় সেখানে বিনিয়োগ বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ট্রেডমার্ক ও মেধাস্বত্ব আইনের কঠোর প্রয়োগ। ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে এ ধরনের নীতিসহ ব্যবসাসংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ, ব্যবসায়ীরা সারপ্রাইজ পছন্দ করে না, অনুমানযোগ্য নীতি চায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি এখনো দেশের একটি সমস্যা। আমেরিকা সুদের হার বাড়ানোয় ডলারের দাম বেড়ে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপের কারণে এখন ডলারের সংকট কাটছে। তাই ধীরে ধীরে এসব সমস্যা কেটে যাবে। আগামী জুলাই থেকে মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে আশা করি।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকা দরকার জানিয়ে সালমান এফ রহমান এমপি বলেন, এত বড় অর্থনীতির তুলনায় আমাদের পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী থাকা দরকার। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, এক্সচেঞ্জ কমিশন সবার সঙ্গে কথা বলছি। প্রধানমন্ত্রীও চান আমাদের পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করতে। তাই পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে যা প্রয়োজন, তা করতে হবে। পুঁজিবাজার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পুঁজিবাজার আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সালমান এফ রহমান বলেন, এ বাজেটে নতুন ধরনের সংস্কার আসবে। আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও গত বছরের তুলনায় কমেছে। এটা আমাদের জন্য একটি সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। দেশে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ আছে। এখন আমাদের কাজ করতে হবে। আমি আশাবাদী সামনে অনেক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।
রাজস্ব আয় বাড়াতে করহার কমানো উচিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ এনবিআর। বারবার বলা হচ্ছে, করজালের আওতা বাড়িয়ে করহার কমিয়ে দিলে রাজস্ব আহরণ বাড়বে। কিন্তু তারা প্রতিবার যারা কর দিচ্ছে, তাদের আরও বেশি চাপে ফেলা হচ্ছে। আসলে সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে।