Logo
Logo
×

শেষ পাতা

যুগান্তরকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোই বাজেটের মূল লক্ষ্য

অর্থনীতির স্বার্থে আমাদের মতো করেই সিদ্ধান্ত নেব * উন্নয়ন বাজেট হচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে সংকোচনমূলক

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোই বাজেটের মূল লক্ষ্য

আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নেরও বাজেট। তবে এ বিষয়ে বলার দায়িত্ব আমার নয়, এটি অর্থমন্ত্রীর বিষয়। আমি এতটুকু বলতে পারি, আগামীর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বা উন্নয়ন বাজেট হচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে সংকোচনমূলক। কেননা বর্তমান বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাজেট তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে এডিপির আকার খুব বেশি বাড়েনি বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। ভর্তুকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারি; কিন্তু আমরা অর্থনীতির স্বার্থে আমাদের মতো করেই সিদ্ধান্ত নেব। মঙ্গলবার যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার-হামিদ-উজ-জামান

যুগান্তর : আগামী অর্থবছরের বাজেট কেমন হচ্ছে?
শহীদুজ্জামান সরকার : আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন করা। এসব করতে গিয়ে আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং শতবর্ষের ডেল্টা প্ল্যানসহ সব ধরনের পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। তবে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বা উন্নয়ন বাজেট হচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে সংকোচনমূলক। কেননা বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা এবং বাস্তবতা বিবেচনা করে আমরা এডিপির আকার বাড়িয়েছি মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা। 
যুগান্তর : এডিপি তৈরির ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন?
শহীদুজ্জামান সরকার : এডিপি তৈরিতে সবার আগে গুরুত্ব পেয়েছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। বৃহত্তর অর্থে বলতে গেলে দারিদ্র্য বিমোচন। কেননা আমরা যা কিছুই করি, তার মূলেই রয়েছে দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং তাদের অবস্থার পরিবর্তন করা। এজন্য সবার আগে তাদের দারিদ্র্য অবস্থা থেকে বের করে আনতে হবে। পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে। এই যেমন ধরুন, জনগণ ও পণ্যের চলাচল সহজ এবং দ্রুত করতে হবে। সেজন্য অবকাঠামো, রাস্তাঘাট ইত্যাদির উন্নয়ন করতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন হলে দেশ এগিয়ে যাবে। 
যুগান্তর : বরাদ্দের ক্ষেত্রে গুরুত্বগুলো বলবেন? 
শহীদুজ্জামান সরকার : খাতভিত্তিক এডিপির সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহণ ও যোগাযোগে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রয়েছে শিক্ষা খাতে। তবে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিভাগে।
যুগান্তর : প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ থাকবে?
শহীদুজ্জামান সরকার : এটা ঠিক যে সততা, নিষ্ঠা ও দুর্নীতির জায়গাগুলোয় আমরা এখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। তবে জিকে শামীমের মতো একক ঠিকাদারের আধিপত্য আর থাকবে না। সিস্টেম সেটিকে নো করে দেবে। আমরা সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালা সংশোধনের কাজ করছি। এছাড়া টেন্ডারবাজির যে চিত্র আগে ছিল, টেন্ডার বাক্সের ওপর পা তুলে বসে থাকা কিংবা আর কাউকে অংশ নিতে না দেওয়ার সেই দিনকে সিস্টেম নো করে দিয়েছে। এখন ইজিপিতে দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে এ সংক্রান্ত সব কাজ করা হচ্ছে। দুর্নীতি কমাতেই এসব সিস্টেম কার্যকর করা হয়েছে। এরপরও যে একেবারেই দুর্নীতি কমে গেছে, সেটি বলা যায় না। আমরা চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য। এজন্যই তো তিনি ইজিপির মতো সিস্টেম এনেছেন। আবার আগে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ হতো আমাদের মতো লোকদের মাধ্যমে। ফলে লাখ লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হতো। সেটি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব দিয়েছেন এনটিআরসিএকে। তিনি তো ভাবতে পারতেন আমার নেতাকর্মীরা ইনকাম করে খেয়ে বাঁচুক। তিনি সেটি ভাবেননি। বরং অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এগুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় উদ্যোগের অংশ।
যুগান্তর : মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কতটা কার্যকর?
শহীদুজ্জামান সরকার : আমাদের বর্তমান মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক আছে। মার্কেটে যাতে টাকার ফ্লো নিয়ন্ত্রণ থাকে, সে চেষ্টাই চলছে। গোটা পৃথিবীতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এটাই করা হয়। এখন যেটা করতে হবে সেটা হলো, রাজস্ব আয় বাড়ানো। সরকার সে চেষ্টাই করছে। এজন্য যা যা করা দরকার, তার সবই করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে পৃথিবীর অবস্থা অনেকটা নাজুক। এপ্রিলে আমরা আশা করেছিলাম আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি কমবে। কিন্তু কমেনি। তারা নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এতেও মূল্যস্ফীতি কমছে না। এটা ভালো লক্ষণ নয়। 
যুগান্তর : আগামী অর্থবছরের এডিপি বৈদেশিক ঋণনির্ভর কি না? 
শহীদুজ্জামান সরকার : না, সেটি বলা যায় না। কেননা, আমাদের এডিপিতে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা সরকারি তহবিলের আছে। বাকি ১ লাখ কোটি টাকা বৈদেশিক সহায়তা থেকে ধরা হয়েছে। আমাদের আমদানিনির্ভর দেশ। তাই বর্তমান অর্থনীতির চাপ সামলাতে সক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ঋণ নেওয়া হচ্ছে। তবে সেটি ঋণ ধারণক্ষমতার বাইরে যায়নি। আমরা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে সক্ষম। অন্য অনেক দেশের তুলনায় আমাদের ঋণ গ্রহণের মাত্রা এখনো কম আছে। এরপরও আমরা ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়াতে চাচ্ছি। আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন আছে। তবে আমরা এখনো স্বল্প সুদ ও সহজ শর্তের ঋণ নিচ্ছি। 
যুগান্তর : সামাজিক নিরাপত্তা খাত নিয়ে আপনার মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা জানতে চাই। 
শহীদুজ্জামান সরকার : আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ এবং উপকারভোগী বাড়বে। তবে অনেকে বলেন, এত কম টাকা দিয়ে কি হয়। আমি বলব, সরকার যে ভাতা দিচ্ছে, সেটি ওই ব্যক্তিকে টিকে থাকার জন্য; তার পরিবার-পরিজনের খরচ চালানোর জন্য নয়। মূলত ক্ষুধামুক্ত থাকার জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। 
যুগান্তর : ভর্তুকি ও প্রণোদনা কমার জন্য আইএমএফ-এর শর্ত আছে, বাজেটে কি এর প্রতিফলন ঘটবে?
শহীদুজ্জামান সরকার : ভর্তুকি ও প্রণোদনা অর্থনীতিকে চাঙা রাখতেই প্রয়োজন। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় এটি অব্যাহত রাখতে হবে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন দেশকে যেভাবে দেখে, আমাদেরও সেভাবে দেখে থাকে। আমরা তাদের পরামর্শক গ্রহণ করব, এটা ঠিক; কিন্তু সিদ্ধান্ত নেব আমাদের মতো করেই। 
যুগান্তর : আপনাকে ধন্যবাদ।
শহীদুজ্জামান সরকার : আপনাকেসহ যুগান্তর পরিবারকেও ধন্যবাদ।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম