Logo
Logo
×

শেষ পাতা

শেবাচিম চলছে ৫৬ বছরের পুরোনো জনবল কাঠামোতে

৩৩১ শিক্ষক পদের ১৮৩টি শূন্য * থাকার অনুপযোগী ছাত্র হোস্টেল * সব স্থাপনা পেরিয়েছে ৬০ বছর

Icon

অনিকেত মাসুদ, বরিশাল

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শেবাচিম চলছে ৫৬ বছরের পুরোনো জনবল কাঠামোতে

বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের (শেবাচিম) অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। চালুর সময় এ মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, কিউরেটর ও প্রভাষক পদে মোট শিক্ষকের (চিকিৎসক) সংখ্যা ছিল ৩৩১টি।

গত ৫৬ বছরে কলেজের শিক্ষার্থী বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে বাড়েনি শিক্ষকের সংখ্যা। উলটো শূন্যপদের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে এ কলেজে ৩৩১ শিক্ষক পদের বিপরীতে ১৮৩টি পদ শূন্য। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালুর ৪-৫ বছর আগে নির্মিত চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, ডক্টর কোয়ার্টার পুরোনো হওয়ায় অবস্থা খুবই নাজুক।

শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় অপর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষে বাধ্য হয়ে তাদের গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে মৃত্যুঝুঁকি। কারণ, প্রায়ই শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে থেকে ছাত্রবাসে ফিরেও একই কারণে মৃত্যুঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারছেন না। নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকায় এখানে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, অ্যাকাডেমিক ভবনের অধিকাংশ পলেস্তারা খসে পড়েছে। দেওয়াল ভেদ করে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেছে গাছের শাখা! কোথাও কোথাও সিমেন্ট খসে কাঠামোর রডও বেড়িয়ে গেছে। খসে পড়া দেওয়ালে ঝুলে রয়েছে জানালা। সেই জানালার ভাঙা কাচে কাগজ গুজে বৃষ্টি-বাতাস প্রতিরোধের ব্যর্থ চেষ্টার চিহ্ন প্রায় সর্বত্রই। আবার কোথাও তো জানালাই নেই! এমন অবস্থা প্রায় প্রতিটি ভবনেরই।

এ দুরবস্থার মধ্যে ভোগান্তি বাড়িয়েছে শিক্ষকের শূন্যপদ। এ মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপকের ৫০ পদের বিপরীতে ৪৪টি শূন্য, সহযোগী অধ্যাপকের ৭৪টির মধ্যে ৩৩টি, সহকারী অধ্যাপকের ১২৩টি পদের ৬৪টি এবং প্রভাষকের ৮২ পদের বিপরীতে ৪২টি শূন্য। শুধু কিউরেটরের ২টি পদেই চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির ৪ পদের বিপরীতে ১টি, তৃতীয় শ্রেণির ৫৮ পদের বিপরীতে ২৯টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ১৪৩ পদের বিপরীতে ৮৭টি শূন্য রয়েছে। এ কারণে একেকজন শিক্ষক একাধিক ক্লাস নিয়েও শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারছেন না।

এ মহাবিদ্যালয়ে প্রত্যেক বর্ষে ৩০০ করে শিক্ষার্থী রয়েছেন। সে হিসাবে প্রথম থেকে পঞ্চম বর্ষ পর্যন্ত অধ্যয়ন করছেন ১৫শ শিক্ষার্থী। ৮টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ১৬টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে শ্রেণিকক্ষের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৪০টিতে। ফলে বাধ্য হয়ে পুরোনো ক্লাসরুমে (গ্যালারি) বর্তমানে ৩শ শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে পাঠদান করা হচ্ছে। এ কারণে তারা মনোযোগ ধরে রাখতে পারছেন না। একই অবস্থা হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীকে সামনে নিয়ে চলা ক্লিনিক্যাল ক্লাসেও। এ ক্লাসে সর্বোচ্চ ১৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ জনে। ফলে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা পাচ্ছেন না।

ছাত্রাবাসগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। মোট শিক্ষার্থীর সিংহভাগই ছাত্রাবাসে থাকেন। অথচ ছাত্রদের বসবাসের জন্য নির্ধারিত তিনটি ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনটি ছাত্রাবাসের একটি ভবনের তৃতীয় তলা বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত তিনটি ছাত্রাবাসের একটি বেহাল। শিক্ষকদের ডক্টর কোয়ার্টারের অবস্থাও করুণ। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় ৪০ রুমের মধ্যে ২২টিই ফাঁকা পড়ে আছে। যারা ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন, তাদের ওপরও খসে পড়ছে পলেস্তারা।

একাধিক শিক্ষক জানান, শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষকের পদসংখ্যা বাড়েনি। উলটো যে কটা পদ আছে, এরও অর্ধেকের বেশি শূন্য। এতে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত পাঠদান করানো সম্ভব হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় ক্লাস নিয়েও ছাত্রদের চাহিদা মেটাতে পারছেন না। এছাড়া অবকাঠামোগত সংকটের কারণে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল বাশার বলেন, শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ছাত্রদের পর্যাপ্ত পাঠদান করাতে পারছি না। অতিদ্রুত পুরোনো একাডেমিক ভবন পর্যায়ক্রমে ভেঙে ১৫ তলা ভবন নির্মাণ জরুরি। এছাড়া অন্যান্য ভবনও নতুন করে নির্মাণ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই দ্রুত শিক্ষক সংকট দূরসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম