Logo
Logo
×

শেষ পাতা

শেষ সময় ঠিকাদারের দাবি হাজার কোটি টাকা

পদ্মা সেতু প্রকল্পের টাকা যাচ্ছে নদীশাসনে

দুই খাতে বরাদ্দ কেটে ৬০০ কোটি টাকা স্থানান্তরের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে * ক্লেইমের বিষয়টি শক্তভাবে খতিয়ে দেখা উচিত -মামুন-আল-রশীদ

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পদ্মা সেতু প্রকল্পের টাকা যাচ্ছে নদীশাসনে

ঠিকাদারের দাবি মেটাতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুই খাতের টাকা যাচ্ছে নদীশাসন কাজে। মূল সেতু প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৬০০ কোটি টাকা কাটছাঁট করে এই কাজে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসাবে ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভা।

এতে সভাপতিত্ব করেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পরে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাত থেকে বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এতে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু তারা শেষ সময়ে দাবির বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, এত বড় প্রকল্পে ঠিকাদার চট করে ক্লেইম করতে পারে না। কেননা, এখানে বাড়তি কাজ কিংবা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে বলে বেশি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি ক্রয় বিধিমালায় বলা আছে, কোনো প্রকল্পে ঠিকাদার অতিরিক্ত কাজের কারণে ১৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারে। কিন্তু সেটিও প্রক্রিয়াগত কার্যক্রম শেষ করে অনুমোদন নিয়ে করতে পারে। পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজে কেন ঠিকাদার বাড়তি টাকার জন্য ক্লেইম করেছে, সেটি উপযুক্ত পরামর্শক দিয়ে কঠোরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। প্রকল্পের শেষ সময়ে কেন এমন উদ্যোগ নিতে হবে-বিষয়টি শক্তভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। তবে আন্তঃখাত সমন্বয় করে অন্য খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো সমস্যা নেই।

সূত্র জানায়, বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের অনুমোদিত তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী মোট ব্যয় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। নদীশাসন কাজের সংশোধিত চুক্তিমূল্য ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

নদীশাসন কাজের ঠিকাদারের অনিষ্পন্ন ক্লেইম বা দাবির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা, যা পরামর্শকের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। দাবি নিষ্পত্তির জন্য এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখা দরকার। অনুমোদিত তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতে ৫০০ কোটি এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে ৫০০ কোটি টাকার সংস্থান করা আছে। এ অবস্থায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের দাবি করা সম্ভাব্য ব্যয় মেটানোর জন্য ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাত থেকে ৫০০ কোটি এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাত থেকে ১০০ কোটিসহ ৬০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা যেতে পারে। সভায় এ অর্থ নদীশাসন খাতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

ডিপিইসি সভায় অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব ড. আব্দুর রহিম প্রশ্ন করে বলেন, ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ের ফলে নদীশাসন কাজের চুক্তিবহির্ভূত অতিরিক্ত ভৌত কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে কি না। এছাড়া ক্লেইমের জন্য এ বরাদ্দ ব্যবহার করা যাবে কি না। জবাবে প্রকল্প পরিচালক জানান, ভৌত কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্লেইমের টাকা ঠিকাদারের চুক্তিভুক্ত কাজের আইটেমের মধ্যে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ব্যয় করা হবে।

সভায় পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের যুগ্ম প্রধান এএইচএম আনোয়ার পাশা জানান, যেহেতু প্রকল্পটি ৩০ জুন শেষ হয়ে যাবে, সেহেতু এ দুই খাত থেকে বরাদ্দ অন্যত্র দেওয়া যেতে পারে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব কার্যক্রম বিভাগে দ্রুত পাঠাতে হবে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. জহির রায়হান বলেন, অতিরিক্ত ৬০০ কোটি টাকা কেন প্রয়োজন হবে। এর জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, স্কোপ অব ওয়ার্কস বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজের ভলিউম বেড়েছে। ফলে ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন সব ধরনের আর্থিক বিধিবিধান মেনে প্রস্তাবিত অর্থব্যয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে নদীশাসন কাজে ব্যয়ের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬ মে সেতু বিভাগ থেকে এ বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে। সেখানে বিভাগীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১২ মে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে বরাদ্দ দিতে আপত্তি নেই জানিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে চিঠি দিয়েছে। বর্তমানে কার্যক্রম বিভাগ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম