Logo
Logo
×

শেষ পাতা

নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ে হাতির তাণ্ডব

‘আত্তি আমাগো সঙ্গে মরণ খেলায় মাতছে’

Icon

এমএ হাকাম হীরা, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘আত্তি আমাগো সঙ্গে মরণ খেলায় মাতছে’

‘ধান খাইয়্যা সাবাড় করতাছে। আত্তি (হাতি) আমাগো সঙ্গে মরণ খেলায় মাতছে। দিন দুপুরে ধান খেতে তাণ্ডব চালাইতেছে হাতি। কাঁচা ধানই কাইট্যা নিতাছি। কি করুম, না কাটলে তো সবই গেলগা। এ ধানের আঁটি খাইয়্যা গরুটা তো কয়দিন বাঁইচ্যা থাকব।’ ধানের গোছায় কাঁচি চালানোর সময় কথাগুলো বলছিলেন হাবিবুর রহমান। শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ের আন্ধারুপাড়া গ্রামে হাবিবুরের বাড়ি। তার মতো গারো পাহাড়ের সমতল ভূমিতে আবাদ করা সব ধানের খেত এখন বুনো হাতির চারণ ভূমি। চোখের সামনে পরিশ্রমের ফসল হাতির পেটে চলে যাওয়ায় হা হুতাশ করছেন কৃষকরা।

উপজেলার পলাশিকুড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছ। যার ৭৫ শতাংশ জমির বোরো ধান হাতি সাবাড় করেছে। এছাড়া বুরুঙ্গা কালাপানি গ্রামের রুপচান মিয়া, নছর আলী, সোহেল মিয়া, জালাল উদ্দিন, সিদ্দিক মিয়া, রিয়াজুল, হাজী হোসেন আলী, বাবুল মিয়া ও চাঁন মিয়াসহ অনেক কৃষকের জমির বোর ধান নষ্ট করেছে হাতি। এ কারণে তাদের আর্তনাদ বেড়েই চলেছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২০ দিন ধরে নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে ৪০-৫০টি বন্যহাতি। দিনে-রাতে খাবারের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসছে লোকালয়ের ফসলের জমিতে এবং বাড়িঘরে। খেয়ে সাবাড় করছে উঠতি বোরো ধান, গাছের কাঁঠাল, সবজি খেত। হাতির দলকে প্রতিহত করা যাচ্ছে না। ২৫ এপ্রিল হাতি তাড়াতে গিয়ে মারা গেছেন বাতকুচি গ্রামের কৃষক ওমর আলী মিস্ত্রি (৫০)। ৩ মে রাতে আহত হয়েছেন খলিল মিয়া (৪০) ও আলম মিয়া (৩৫) নামে দু’জন কৃষক।

বারোমারি এলাকার বাসিন্দা লিটন ডেভিড জানান, বুনো হাতির দল এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে এখন মশালের আলো আর পটকার আওয়াজে হাতি ভয় পায় না। উলটো কেউ প্রতিরোধ করতে গেলে হাতির দল তার ওপরে তেড়ে আসে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের মাধ্যমে হাতির আক্রমণ থেকে জানমাল রক্ষার চেষ্টা করছি। গারো পাহাড়ে হাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছে। তাই তিনি বন্যহাতিকে উত্ত্যক্ত না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগে হাতিদের অবাধ বিচরণের জায়গা ছিল এবং পাহাড়েই খাবারের উৎস ছিল। ফলে হাতির লোকালয়ে আসার খুব একটা প্রয়োজন হতো না। কিন্তু এখন পাহাড়ের জায়গা দখল করে বসতি স্থাপন, ভারত সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া, পানির উৎস পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো ধ্বংস করাসহ নানা কারণে হাতি চলাচলের জায়গা সংকুচিত হয়েছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিশায় রিছিল বলেন, পাহাড়ি এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আছে। আমরা সে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং বন্যহাতির তাণ্ডব থেকে জানমাল রক্ষার জন্য মশালের কেরোসিন তেলের ব্যবস্থা করছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম