ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ
কলাম্বিয়ার ক্যাম্পাসে পুলিশের গুলি গ্রেফতার শতাধিক
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গাজায় ইসরাইলি অভিযান বন্ধের দাবিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখেও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সমাপনী (সমাবর্তন) অনুষ্ঠান চলার সময়ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৫ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলিও ছুড়েছে এবং শখানেক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে ১৮ দিনের বিক্ষোভে ৪৭ ক্যাম্পাসে ৬১ সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ অন্তত ২৪০০ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। খবর এপি, রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা। যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভের সূচনা হয়েছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংঘর্ষ, পুলিশি অভিযান, গ্রেফতার, বহিষ্কার কোনো কিছুই দমাতে পারেনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের। শনিবার রাতে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলিও ছুড়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তবে এতে কেউ আহত হননি।
নিউইয়র্ক পুলিশে উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে গিয়ে ঘটনাচক্রে একজন পুলিশ সদস্য গুলি ছুড়েছেন।
পাশের একটি দেওয়াল থেকে গুলিটি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, মূলত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানহাটন ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বিক্ষোভকারীদের সরাতে আসে পুলিশ। সে সময় একজন পুলিশ সদস্যের অস্ত্র থেকে দুর্ঘটনাবশত গুলি বের হয়। তবে এতে কেউ আহত হননি। পরে সেই ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ শখানেক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে।
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার সকাল পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলছিল। ওই সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ক্যাম্পাসের লন থেকে কয়েকজন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীকে আটক করছে।
এছাড়া বিক্ষোভ দমন করতে রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার করছে। এরপরই বিক্ষোভ একরকম দাঙ্গায় রূপ নেয়। এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জিম রায়ান বলেন, বিক্ষোভকারীরা তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ করবে-শুক্রবার রাতে এমন খবরে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশকে জানালে বিক্ষোভকারীদের আটক করা হয়। এদিকে এপি জানিয়েছে, ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ২৫ শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
এপি বলছে, ১৮ এপ্রিল থেকে শুরু করে এই বিক্ষোভকে ঘিরে অন্তত ৬১টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ৪৭টি ক্যাম্পাস থেকে এ ঘটনায় দুই হাজার ৪০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে থেকে পাওয়া তথ্য থেকেই এপি এ তথ্য জানিয়েছে। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে অস্থায়ী তাঁবু সরিয়ে নিতে অস্বীকার করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ বলপ্রয়োগ করে তাঁবু সরানোর চেষ্টা চালালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষের জেরে ২৫ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানস্থলে মঞ্চের সামনে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এই বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। অ্যান আরবর স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কয়েক ডজন শিক্ষার্থী মাথায় ঐতিহ্যবাহী কেফিয়েহ আর সমাবর্তনের টুপি পরে প্ল্যাকার্ড ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মঞ্চের সামনে দিয়ে হেঁটে যান। শিক্ষার্থীরা তখন যুদ্ধবিরোধী স্লোগান দেন এবং পতাকা উঁচিয়ে প্রতিবাদ জানান। এ সময় দর্শকদের বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিতেও দেখা গেছে। ক্যাম্পাস পুলিশ দ্রুত বিক্ষোভকারীদের ঘিরে ফেলে স্টেডিয়ামের পেছনে নিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একসঙ্গে সমাবর্তন অনুষ্ঠান চলছিল। গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে ১৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন বিশ্বের অনেক দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভে নেমেছেন ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ভারত, লেবানন, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও মেক্সিকোর শিক্ষার্থীরা।