Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মানিকগঞ্জের সর্বনাশা ‘স্টোন ব্রিকস’

ফসলি জমি কাটা থামেনি প্রশাসনের ঠেলাঠেলি

যুগান্তরের খবরে তোলপাড়, বেলার পরিদর্শন আজ * অনুমোদন না থাকলেও নীবর পরিবেশ অধিদপ্তর

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফসলি জমি কাটা থামেনি প্রশাসনের ঠেলাঠেলি

মানিকগঞ্জের ঘিওর ও শিবালয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের তিন ফসলি জমির মাটি কাটার উৎসব বন্ধে এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে চলছে ঠেলাঠেলি। নিয়ম ভেঙে উর্বর কৃষিজমির ‘মাটিখেকোদের’ দৌরাত্ম্যের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন জানলেও রহস্যজনক কারণে তারা নীবর বলে অভিযোগ আছে। সৎ সাহসের সঙ্গে ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা’ বাঁধার দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ যাচ্ছে আজ। শত শত বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে কারা-কীভাবে স্টোন ব্রিকসে সরবরাহ করছে? এতে আইনের ব্যত্যয় হচ্ছে কি না? মাটি কাটার ফলে পরিবেশের কতটা ক্ষতি হচ্ছে-এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করবে দলটি। এরপর পরিদর্শন দলের প্রতিবেদন অনুযায়ী বেলার পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে স্টোন ব্রিকস কর্তৃপক্ষের ফসলি জমি থেকে মাটি সংগ্রহের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। এরপরও মাটি কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ২৫ এপ্রিল যুগান্তরে ‘মানিকগঞ্জে ফসলি জমি ধ্বংসের মহোৎসব : সর্বনাশা ‘স্টোন ব্রিকস’ শিরোনামে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশের পর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সাময়িকভাবে কয়েকদিনের জন্য তৎপরতা চালায় স্থানীয় প্রশাসন। ‘দায় এড়াতে’ তারা নিজেদের মধ্যে চিঠি চালাচালিও করে। কিন্তু দৃশ্যত মাটি কাটা বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে যুগান্তরে খবর প্রকাশের পর দেশের সর্ববৃহৎ স্বয়ংক্রিয় ইট তৈরির এ কারখানায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে-এমন এক জামায়াত নেওয়ার বিপুল বিনিয়োগ থাকার গুঞ্জন উঠেছে। ওই নেতার চাচাতো ভাই এখনো প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে মানিকগঞ্জের স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সরব আলোচনাও আছে। অভিযোগ আছে, ঢাকা থেকে তিনি যখন কারখানায় যান, তখন স্থানীয় জামায়াত-শিবিবের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে বৈঠক করেন। ঢাকার প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এ বিষয়ে খোঁজ নিলেই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে এলাকাবাসীর দাবি। নিয়মিত অবৈধ সুবিধা নেওয়ার কারণে স্থানীয় প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারা এ বিষয়ে জেনেও না জানার ভান করে আছেন।

জানা যায়, যুগান্তরের প্রতিবেদন প্রকাশের পরই বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে সরেজমিন তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য ২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে। বেলার প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোজাফফর ফয়সাল প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।

জানতে চাইলে মোজাফফর ফয়সাল যুগান্তরকে বলেন, ‘শত শত বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে স্টোন ব্রিকস নামের একটি ইট তৈরির কারখানায় সরবরাহের খবর আমাদের নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবেও আমাদের কাছে বেশকিছু তথ্যপ্রমাণ এসেছে। এরপর সংগঠনের পক্ষ থেকে সরেজমিন তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনের পর পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

৫ মে পরিবেশ অধিদপ্তর মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয় থেকে জারি করা একটি পত্র এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সহকারী পরিচালক লোভানা জামিলের সই করা ওই পত্রে বলা হয়েছে, ‘বিধিমালা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিবেশগত ছাড়পত্রের মেয়াদ ইস্যুর তারিখ থেকে পরবর্তী ১ বছর পর্যন্ত বহাল থাকার বিধান রয়েছে। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার স্টোন ব্রিকস লিমিটেডের অনুকূলে মাটি কাটা/সংগ্রহের অনুমতিপত্র অত্র দপ্তরে দাখিল করা হয়নি।’

এছাড়া ২৮ এপ্রিল শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো এক পত্রে বলা হয়েছে, ‘মনাইল চকের ব্যক্তিমালিকানাধীন কৃষিজমিতে রাত ১০ থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত চারটি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ৩৮/৪০টি ডাম্প ট্রাকে স্টোন ব্রিকসের কারখানায় বিক্রি করা হয়। ‘মাটি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা সন্ত্রাসী ও ক্ষমতাবান হওয়ায় স্থানীয় কেউ তাদের নাম বলেনি। মনাইল চকের সব জমি কৃষিকাজের জন্য খুবই উর্বর। এভাবে কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রি করলে কৃষি উৎপাদন বন্ধ হয়ে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ৭ক-এর (ক) থেকে (ঙ) মোতাবেক কোনো উর্বর কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি করা যাবে না। এমতাবস্থায় কৃষিজমি রক্ষার্থে এবং জনস্বার্থে দ্রুত কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’ এরপরও শিবালয় উপজেলা প্রশাসন মাটি কাটা বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জানতে চাইলে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘চক্রের সদস্যরা অনেকটা চুরি করে রাতের অন্ধকারে মাটি কাটে। আমরা মোবাইল কোর্ট চালাতে গেলে তাদের ঘটনাস্থলে পাই না। তাই তাদের শাস্তিও দিতে পারি না। কারখানাটি ঘিওর উপজেলায় অবস্থিত। তাই মাটি আমার এলাকা থেকে গেলেও কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো এখতিয়ার আমার নেই। তবে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো আমলে নিয়ে আমরা একটা শক্ত এজাহার দায়েরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছি। এ নিয়ে শিবালয় থানার অফিসার ইনচার্জের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই মামলা করা হবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম