টেন্ডার না পেয়ে তাণ্ডব
বিএমডিএর প্রকৌশলীকে চড় থাপ্পড় কিলঘুসি
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
টেন্ডার না পেয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক প্রকৌশলী কাম প্রকল্প পরিচালককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছে কৃষক লীগ নেতার নেতৃত্বাধীন এক দল ঠিকাদার।
রোববার রাজশাহীতে বিএমডিএর সদর দপ্তরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হোদার কক্ষের এ ঘটনায় সুমন্ত কুমার বসাক নামের এক প্রকৌশলীর কলার ধরে চড়থাপ্পড় ও কিলঘুসির পাশাপাশি টানাহ্যাঁচড়া করা হয়।
এ ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন রাজশাহী মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাকির হোসেন ওরফে লস্কর বাবু নামের নেতা কাম ঠিকাদার। অভিযোগ রয়েছে লস্কর বাবুর সিন্ডিকেট বছরের পর বছর ধরে বিএমডিএর অধিকাংশ কাজ একচেটিয়া কবজা করে আসছে। কাজ নেওয়ার পর তিনি আবার সেটা অন্য ঠিকাদারের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। লস্কর বাবুর হাতে গত ১৫ বছর ধরে জিম্মি হয়ে আছেন বিএমডিএর কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অন্যদিকে আক্রান্ত প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাকও একজন বড় মাপের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসাবে বিশেষ পরিচিতি রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ঘটনার শিকার বিএমডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাক ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ নামের একটি বড় প্রকল্পের পরিচালক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ৫০টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করেন সুমন্ত কুমার। প্রতিটি কাজের মূল্য ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার করে। এই প্যাকেজগুলো রাজশাহীর ঠিকাদারদের দেওয়ার জন্য প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের ঘুস অগ্রিম নিয়েছিলেন। শুরু থেকেই এসব প্যাকেজের কাজ কবজা করতে তৎপর ছিলেন কৃষক লীগ নেতা লস্কর বাবু। কিন্তু সম্প্রতি প্রকৌশলী বসাক অনেকটা গোপনে ৫০টি প্যাকেজের সব কাজই নাটোর, নওগাঁ ও ঈশ্বরদীর কয়েকজন ঠিকাদারকে দিয়ে দেন। টেন্ডারগুলোর কার্যাদেশ দিয়ে ১০ দিন তিনি অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কাজগুলো না পেয়ে লস্কর বাবুর নেতৃত্বে রাজশাহীর ঠিকাদার প্রকল্প পরিচালক সুমন্ত কুমারকে খুঁজছিলেন। বিএমডিএর কর্মকর্তা কর্মচারীরা আরও জানান, লস্কর বাবু গত কয়েকদিন ধরে সুমন্ত কুমারের দপ্তরের আশপাশে ক্যাডার নিয়ে মহড়া দিয়েছেন। বসাক অফিসে আছে কিনা উকিঝুঁকি দিয়ে দেখে গেছেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনিও ১০ দিন অফিস করেননি।
লস্কর বাবু বলেন, ঘটনা খুব একটা বড় নয়। হইচই কিছুটা হয়েছে। বসাক একজন আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। বিএমডিএতে তার মতো দুর্নীতিবাজ অফিসার আর দ্বিতীয়টি নেই। কাজ দেব বলে রাজশাহীর অনেক ঠিকাদারের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েছিলেন। তবে আরও বেশি টাকা পেয়ে সব কাজ রাজশাহীর বাইরের ঠিকাদারদের দিয়ে অফিস থেকে লাপাত্তা হয়ে যান। ১০ দিন ধরে আমরা তাকে খুঁজছিলাম।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে জানতে প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাককে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বরং প্রতিবারই সংযোগ কেটে দিয়েছেন।
বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সামশুল হোদা বলেন, আমি সিনিয়র কর্মকর্তা হওয়ায় সবাই আমার কক্ষে বসেছিলেন। কয়েকজন ঠিকাদার প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাকের কলার চেপে ধরে কিছুটা টানাহ্যাঁচড়া করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী আবদুর রশিদ বলেন, ‘অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছেন। আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। রাজশাহী ফিরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’