Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক শেয়ারবাজার

বাজার ছাড়ছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী * সার্কিট ব্রেকারের সীমা কমানোয় আতঙ্ক আরও বেড়েছে

Icon

মনির হোসেন

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক শেয়ারবাজার

ফাইল ছবি

চরম অস্থির শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই কমছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। গত এক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ১৬৮ পয়েন্ট কমেছে। পতন ঠেকাতে বুধবার মূল্যসীমায় (সার্কিট ব্রেকার) আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম একদিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এতে বাজারে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার সূচক আরও ৬০ পয়েন্ট কমেছে। সবমিলিয়ে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় খারাপ। বাজার ছাড়ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ফলে বর্তমানে শেয়ারবাজার মানেই বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বাজারে কিছু অস্বাভাবিক লেনদেন কমিশনের নজরে এসেছে। এরপর নিম্ন লেভেলে সার্কিট ব্রেকারের (একদিনে দাম কমার সীমা) সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কমিশন কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না। তবে কেউ আইনের লঙ্ঘন করলে তদন্ত করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই বাজারে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়েছে। এদের মধ্যে বড় অংশই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। আর বাজারের এই নেতিবাচক অবস্থার জন্য এক এক সময় ভিন্ন ভিন্ন অজুহাত দেখানো হয়। কখনো দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির নেতিবাচক অবস্থা, কখনো বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ব্যাংকের সুদের বৃদ্ধি অন্যতম। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইরান ও ইসরাইল যুদ্ধ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশ যুদ্ধের মুখোমুখি হলেও এর কোনো দেশেরই শেয়ারবাজারে প্রভাব পড়েনি। ইরান ও ইসরাইল দুই দেশেরই শেয়ারবাজার স্বাভাবিক। অর্থনীতিবিদ ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, মোটা দাগে বাজারে দুটি সংকট। চাহিদার দিক থেকে সংকট হলো-এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। সরবরাহের দিক থেকে সংকট হলো-ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে কারসাজি ও সিন্ডিকেটের জয়জয়কার অবস্থা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন দুর্বলতাও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। দীর্ঘদিন থেকে এই সংকট চলে আসছে। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু যোগ হয়েছে। ফলে সবার আগে আস্থা সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে, কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তবে কাজটি খুব সহজ নয়।

এদিকে দীর্ঘদিন থেকে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। কমছে মূল্যসূচক। কমিশন মনে করে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করছে। লেনদেন মূল্যসীমায় আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। তবে বাড়তে পারবে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এর আগে কমার ক্ষেত্রেও এই সীমা ছিল ১০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি বাজার। ওইদিন বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। একক দিন হিসাবে ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৩৯৬টি কোম্পানির ১৩ কোটি ৮৪ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৫১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ৬৯টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ৩০০টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ১০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৬ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

শীর্ষ দশ কোম্পানি : বৃহস্পতিবার ডিএসইতে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো-ওরিয়ন ইনফিউশন, তৌফিকা ফুডস, আইটিসি, কোহিনূর কেমিক্যাল, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, মালেক স্পিনিং, ফার্মা এইডস, বিচ হ্যাচারি এবং বেস্ট হোল্ডিংস। ডিএসইতে বৃহস্পতিবার যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলো-এডিএন টেলিকম, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, এম্বী ফার্মা, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্টিজ, কোহিনূর কেমিক্যাল, লিব্রা ইনফিউশন, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আইটিসি, জিকিউ বলপেন ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো-বাটা সুজ, রেনেটা, ইউপিজিডিসিএল, নিটল ইন্স্যুরেন্স, সেনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, এডভেন্ট ফার্মা, ডোমিনেজ স্টিল, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং আফতাব অটোমোবাইল।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম