বুয়েটে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে ঈদের পরও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা। তবে এ পরীক্ষায় অংশ নেননি কেউ। এদিকে রাজনীতি বন্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বুয়েট প্রশাসন।
বুয়েট সূত্রে জানা যায়, ঈদের পর বুয়েট পুরোদমে খুলে ১৭ এপ্রিল বুধবার। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষায় অংশ নেন মাত্র ৮ জন। বাকি ১ হাজার ২৭১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা বর্জন করেন। এরপর বৃহস্পতিবার ছিল ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা। এই ব্যাচে ১ হাজার ৩০৫ শিক্ষার্থীর একজনও পরীক্ষায় অংশ নেননি।
সকাল ৯টায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকে ক্যাম্পাসে কাউকেই উপস্থিত দেখা যায়নি। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরীক্ষার হলে কর্তব্যরত শিক্ষকরা প্রশ্নের প্যাকেট হাতে বের হয়ে যান। এর আগে ৩০ মার্চ প্রথমবারের মতো টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এর আগে ১৮ ও ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন। পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে অটল তারা।
পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার বিষয়ে নিহত আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ও বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফায়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, পরীক্ষা দিতে না পারার ক্ষতি সবারই হচ্ছে। সবারই অনেক পরিকল্পনা থাকে টার্ম ব্রেক নিয়ে। তা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার ব্যাপারে কেউ আপস করছে না। সত্যিই এটা গর্ব করার মতো বিষয়।
আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বুয়েট : ২৭ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বুয়েট। পরে ছাত্রলীগের একজন নেতার করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই বলে জানান হাইকোর্ট। আদালতের আদেশের পর ছাত্রলীগ বুয়েটে কমিটি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি বন্ধ রাখার দাবিতে নিজেদের অবস্থানে অটল। একই অভিমত ও দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরাও।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বুয়েটে রাজনীতি বন্ধ রাখতে শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান।
তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ এখন পর্যন্ত তারা হাতে পাননি। হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পর আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট।
অধ্যাপক আব্দুল জব্বার বলেন, ২০১৯ সালে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে বিজ্ঞপ্তিটি ছিল, সেই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করা হয়েছে নাকি বলা হয়েছে যে স্থগিত করা হলো অথবা কেন বাতিল করা হলো কিংবা কেন স্থগিত করা হবে না? নিশ্চয়ই হাইকোর্ট আমাদের কারণ দর্শাবেন। যদি কারণ দর্শানো হয়, তখন কনটেন্ট-মেরিট দেখে আমাদের উত্তর দিতে হবে।
তিনি বলেন, বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে যে, বুয়েট কর্তৃপক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে থাকতে চাইছে। এটি আসলে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আইনি প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক গতিতে আমাদের অবশ্যই রেসপন্স করতে হবে। আইনি যে প্রক্রিয়া রয়েছে, এটি শেষ অবধি আমরা কনটেস্ট করব। আপিল বিভাগে যাব, আপিল করব। সেখানে আমরা একা নই, আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইরাও থাকবেন।