Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রমজানের শেষ জুমায় তোমার করুণা চাই হে আল্লাহ

Icon

মুফতি তানজিল আমির 

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রমজানের শেষ জুমায় তোমার করুণা চাই হে আল্লাহ

ফুরিয়ে এলো রমজান। চলে যাচ্ছে পবিত্র দিনগুলো। বিদায় নিচ্ছে মহিমান্বিত মেহমান। আজ রমজানের শেষ শুক্রবার বা পবিত্র জুমাতুল বিদা। রমজানের শেষ জুমা মুসলিমবিশ্বের কাছে জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত। 

রমজানের আখেরি এ জুমার মাধ্যমে পবিত্র এ মাসকে অনেকটাই বিদায় জানানো হবে। জুমাতুল বিদা রোজাদারকে স্মরণ করিয়ে দেয় রমজানের শেষলগ্নে এর চেয়ে ভালো কোনোদিন আর পাওয়া যাবে না। 
সুতরাং এ পুণ্যময় দিনটির যথাযথ সদ্ব্যবহার করা উচিত। রমজানকে বিদায় জানাতে এ দিনে মসজিদগুলোয় বিশেষ মোনাজাতের ব্যবস্থা থাকে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও মনে করে থাকেন রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানের মহিমা জুমাতুল বিদার মধ্য দিয়ে আরও বেশি মহিমান্বিত হয়। রমজানের শেষ জুমা হিসাবে মুসলিম উম্মাহর কাছে দিনটির বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। 

জুমার দিনের স্বতন্ত্র ফজিলত অনেক বেশি। রমজানের প্রতিটি জুমা ফজিলত ও তাৎপর্যের দিক থেকে অনন্য। বিদায়ি জুমা হিসাবে জুমাতুল বিদার মর্যাদা ও ফজিলত আরও বেশি। রমজান ও রোজার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মাঝে তাকওয়া বা খোদাভীতির যোগ্যতা অর্জন করানো।

তাকওয়ার অর্থ হলো-যেসব জিনিস থেকে, যেসব কাজকর্ম থেকে আল্লাহ ও তাঁর নবিজি (সা.) নিষেধ করেছেন, সেসব থেকে বেঁচে থাকা। এসব জিনিসের কল্পনাও যদি চলে আসে তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা। পক্ষান্তরে যেসব জিনিসের হুকুম তাঁরা দিয়েছেন, সেসব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা। 

আমরা যেভাবে রমজানে একমাত্র আল্লাহর নির্দেশে দিনের বেলায় হালাল এবং পবিত্র জিনিসগুলো বর্জন করেছি, তাহলে ওই আল্লাহর হুকুম অমান্য করে রমজানের বাইরের দিনগুলোয় কীভাবে গুনাহে লিপ্ত হব? আল্লাহকে অসন্তুষ্টকারী কাজকর্ম কেন করে বেড়াব? কেন আমরা মিথ্যা বলব? কেন আমরা মিথ্যা সাক্ষ্য দেব? কেন আমরা মানুষের মনে কষ্ট দেব? কেন অপরের হক নষ্ট করব? কেন মানুষের অধিকার হরণ করব? কেন জুলুম করব? কেন আমরা অন্যের রক্ত ঝরাব? মোট কথা, যত খারাপ বিষয় আছে, যেন সেসব অন্যায় ও গুনাহ থেকে বাঁচার অভ্যাস, ধ্যান-খেয়াল এবং গুরুত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়-এটিই তাকওয়া।

প্রিয় পাঠক! জুমার দিন মুমিন মুসলমানদের ইমানি সম্মেলন হয়। এ দিনের তাৎপর্য বর্ণনা করে নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে জুমাবার সর্বাধিক মর্যাদাবান ও নেতৃস্থানীয় দিন। এ পুণ্যদিনে আদি পিতা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়। একই দিনে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন এবং পৃথিবীতে আগমন করেন। এ দিনে তার ইন্তেকাল হয়। এ শুক্রবারেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এ পুণ্যদিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হয় (মিশকাত)।

রমজানের শেষ শুক্রবার সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মসজিদ আল-আকসা’ প্রতিষ্ঠা করেন বলে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়। 

এজন্য প্রতিবছর সারা বিশ্বের মুসলমান রমজানের শেষ শুক্রবার ‘আল কুদস’ দিবস হিসাবে উদ্যাপন করেন। জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যাতে যে দোয়াই করা হয়, তাই কবুল করা হয়। জুমাতুল বিদার বিশাল জামাতে আমাদের দেশের বিভিন্ন মসজিদে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাই এদিনের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

আর সাধারণ জুমার দিনেই যেখানে নির্দিষ্ট মুহূর্তে যে কোনো দোয়া কবুল করা হয়ে থাকে, সেখানে জুমাতুল বিদায় তো এর ফজিলত আরও উন্মুক্ত হওয়াই যুক্তিযুক্ত। রমজানে প্রতিদিন ইফতারপূর্ব সময়ে আল্লাহতায়ালা ৭০ হাজার গুনাহগারকে ক্ষমা করে দেন। 

এ হিসাবে সমগ্র রমজানে যেই পরিমাণ গুনাহগারকে ক্ষমা করা হয় শুধু জুমাতুল বিদা তথা আখেরি জুমায় সেই সংখ্যক ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয়। তাই এ দিনে উচিত প্রত্যেক রোজাদারকে আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে প্রার্থনা করা, ক্ষমা আদায় করা। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে জুমাতুল বিদার বরকত অর্জন করার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: গবেষক আলেম ও সেন্টার ফর এডুকেশন রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম