জাস্টিন ট্রুডোর নামে পাবনায় জন্মসনদ
‘বাপ-মা’ নেই ইউনিয়ন পরিষদের
পাবনা ও সুজানগর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর জন্ম পাবনার সুজানগরে। সত্যি না হলেও তার একটি জন্মসনদ থেকে এমনটাই জানা গেছে। সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন থেকে ট্রুডোর নামে ইস্যু করা হয়েছে ভুয়া এই জন্মসনদ। এ নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যসহ প্রশসানে তোলপাড় চলছে। শুধু তাই নয়, ঘটনাটি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। কী করে এমনটা ঘটল সেই প্রশ্ন এখন সবার মুখে। আর প্রশ্ন উঠেছে জন্মনিবন্ধন সার্ভারের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়েও। এ ঘটনায় সরকারের রেজিস্ট্রেশন জেনারেলের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসনকে তদন্ত কমিটি করে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যায়, নাম জাস্টিন ট্রুডো, পিতা-পিয়েরে ট্রুডো, মাতা-মার্গারেট ট্রডো; জাতীয়তা-বাংলাদেশি।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, গত বছরের শেষের দিকে আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মিয়া মারা যান। এরপর থেকে এক ইউপি সদস্য (মেম্বার) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ইউনিয়নের সব কর্মকাণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আওলাদ হাসানের নিয়ন্ত্রণে। তার তদারকিতে পরিষদের চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমন টাকার বিনিময়ে সেবাগ্রহীতাদের কাজ করে দেন। ইমন কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও জন্ম নিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবার ক্ষেত্রে ওটিপি নম্বর সচিবের কাছে থাকে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জাস্টিন ট্রুডোর নামে যে জন্ম নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে সেটির প্রিন্ট দেওয়া হয়েছে রাত ৯টায়। কাজেই ওই সময় ওটিপি নম্বর সচিব না দিলে ইমন কোথায় পেলেন। মূলত সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে পরস্পরের যোগসাজশেই এসব কাণ্ড ঘটছে।
এ বিষয়ে জানতে কম্পিউটার অপারেটর ইমনের সঙ্গে কথা বলতে পরিষদে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। তবে ইউপি সচিব আওলাদ হাসান বলেন, ‘আমি এসবের কিছুই জানি না। সার্ভারের ইউজার নাম এবং পাসওয়ার্ড আমার কাছে থাকলেও ইমন হয়তো কোনো সময়ে জেনে গেছে। আমার অগোচরে সে ওটিপি কোড নিয়ে এসব করেছে। এই ঘটনায় আমি দায়ী নই। এ ঘটনায় আমি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তবে স্থানীয়রা জানান, ইউপি সচিব দায় এড়াতে বিষয়টি পুরোপুরি ইমনের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুখময় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা কিছু বলতে পারব না। যারা এটি করেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে ডিসি স্যার তদন্ত করবেন। তদন্তে সব জানা যাবে। জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ঘটনাটি লজ্জার। আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছি। এ ঘটনায় সরকারের রেজিস্ট্রেশন জেনারেলের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসনকে তদন্ত কমিটি করে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।