অগ্নিঝরা মার্চ
‘লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![‘লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/03/22/image-787463-1711089450.jpg)
অগ্নিঝরা মার্চের ২২তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে গোটা দেশ অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল ছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মরণপণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রস্তুতি নিতে থাকে মুক্তির লড়াইয়ের। স্বাধীনতার দাবিতে সভা-সমাবেশে বিক্ষুব্ধ বাঙালির গগনবিদারী স্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত। জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হাজার হাজার মানুষ এদিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে হাজির হয়। সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু এদিন বেশ কয়েকবার বক্তৃতা করেন। সংগ্রামী জনতার গগনবিদারী জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান ও করতালির মধ্যে জনগণের নেতা ঘোষণা করেন-বন্দুক, কামান, মেশিনগান জনগণের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না।
এদিন সকালে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো বৈঠকে মিলিত হন। এটি ছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ বৈঠক। এ বৈঠক প্রায় সোয়া ঘণ্টা স্থায়ী হয়। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
এদিন দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক প্রহরায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠক করেন। পরে সন্ধ্যায় তার নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতারা প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ও আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।
একাত্তরের এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতাদের মধ্যে আলোচনাক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হলো।
এদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোরদের সমাবেশ হয়। পরে শিশু-কিশোররা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। পাশাপাশি পল্টন ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা সমাবেশ ও কুচকাওয়াজের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে তাতে সাবেক সৈনিকরা আর সাবেক হিসাবে বসে থাকতে পারে না। আমাদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদ। আমরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালনে প্রস্তুত।
এদিন সব পত্রিকায় পাঠানো বিশেষ বাণীতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আন্দোলনের বৈধতার কারণে বিজয় এখন থেকে আমাদেরই। বাণীর শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের মুক্তি।’ এতে সাত কোটি বাঙালির সামগ্রিক মুক্তির জন্য চলমান আন্দোলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এ সংগ্রাম চলবে। বুলেট, বেয়োনেট ও বন্দুক দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে স্তব্ধ করা যাবে না, কারণ তারা আজ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য অর্জনে যে কোনো প্রকার আত্মত্যাগে আমরা প্রস্তুত। যে কোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।