ঈদুল ফিতরের যাত্রা নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগ
মহাসড়কের ১৫৫ স্পটে যানজটের শঙ্কা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এবারও আসন্ন ঈদুল ফিতরের যাত্রায় মানুষের ভোগান্তির কারণ হতে পারে যানজট। ইতোমধ্যে দেশের ১৫৫টি যানজট স্পট চিহ্নিত করেছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলো। চিহ্নিত যানজট স্পটগুলোয় মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সাত কৌশল বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই কৌশলগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে ঈদযাত্রা (আসা-যাওয়া) অনেকাংশে নির্বিঘ্ন করা সম্ভব হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ‘ঈদুল ফিতর ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে সড়কপথে যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। রাজধানীর বনানীর বিআরটিএর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন-সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লা নুরীর সঞ্চালনায় ওই সভায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি, পরিবহণ মালিক সমিতির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
যানজট নিরসনের সাত কৌশল : ঈদযাত্রার যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আন্তঃসংস্থার সভায় সাতটি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগের ৩ দিন ও পরের ৩ দিন মহাসড়কে ট্রাক, ক্যাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্ট সামগ্রী, ওষুধ, সার এবং জ্বালানি সরবরাহকারী যানবাহনসমূহ এর আওতামুক্ত থাকবে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঈদের দিনসহ আগের ৭ দিন এবং পরের ৫ দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখতে হবে। গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্প-কলকারখানার শ্রমিকদের একত্রে ছুটি না দিয়ে ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। জাতীয় মহাসড়ক ও করিডরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ঈদের সাত দিন আগেই শেষ করা। সারা দেশের মহাসড়কের চিহ্নিত ১৫৫টি যানজট স্পট ঈদের আগে ও পরে নিবিড় মনিটরিংয়ের আওতায় আনা। পণ্যপরিবহণ যানবাহনে ঈদের সময় কোনো যাত্রী পরিবহণ করা যাবে না এবং নির্দিষ্ট ২২টি সড়ক ও মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ করতে হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৮টি স্পট : কাঁচপুর ব্রিজের পূর্ব ঢাল, গ্রিনলাইন ইউটার্ন, মদনপুর মোড়, কেওডালা ইউটার্ন, কনকা ইউটার্ন, মোগড়াপাড়া, মেঘনা টোল প্লাজা, সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড, সানারপাড় ইউটার্ন, মৌচাক স্ট্যান্ড, দশতলা ভবন, শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড, আদমজী রোড, পাখির মোড়, ওয়াটার পার্ক, ভবের চর বাসস্ট্যান্ড, কলেজ গেট, আনারপুরা, বাটেরচর নতুন রাস্তা, হাঁস পয়েন্ট, দাউদকান্দি টোল প্লাজা, বলদাখাল, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ, সুয়াগাজী বাজার (উভয়মুখী), সদর দক্ষিণ থানার সামনে কাটা, নুরজাহার হোটেলের সামনে কাটা, কোটবাড়ী ইউটার্নের উভয় পাশে, জাগুরঝুলি কাটা, আলেখার চর কাটা, ক্যান্টনমেন্ট মোড় (উভয়মুখী), নাজিরাবাজার ইউটার্ন, নিমসার বাজার ইউটার্ন, চৌদ্দগ্রাম বাজার, বিসিক মোড়, লালপোল, বাড়বকুণ্ড বাজার, ছোট কুমিরা, কেডিএস মোড়, ভাটিয়ারী পয়েন্ট, ফুটলিং, ফৌজদারহাট, সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ড বা বড় দারোগারহাট স্কেল, মীরসরাই থানাধীন মিঠাছড়া বাজার, নিজামপুর বাজার, বড়তাকিয়া বাজার ও জোরারগঞ্জ থানাধীন বারৈয়ারহাট বাজার।
ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ৫২টি স্পট : বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, গোড়াই মিলগেট, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব গোলচত্বর, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর, ফেন্সি গেটের পূর্ব অংশ, ফেন্সি গেট সার্ভিস লেন, মুলিবাড়ী আন্ডারপাসের পূর্বে, কড্ডা ফ্লাইওভারের পশ্চিমে, কোনাবাড়ী আন্ডারপাসের পূর্বে, হাটিকুমরুল পাঁচলিয়া বাসস্ট্যান্ড, হাটিকুমরুল ধোপাকান্দি ব্রিজ, হাটিকুমরুল গোল চত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, ঘুরকা বেলতলা, ভূঁইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড, হোটেল হাইওয়ে অভিভিলা, ঘোলমাইল, সিরাজগঞ্জ বাইপাস, জমজম দইঘর, বগুড়া বাজার থেকে সীমাবাড়ী কলেজ, পেন্টাগন হোটেল, ফুড ভিলেজ হোটেল, হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদ, দাদপুর জামাই রোড, নিউ পাপিয়া হোটেল থেকে চাচা ভাতিজা হোটেল পর্যন্ত, জোড়া ব্রিজ, চান্দাইকোনো গরুর হাট, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক কাচিকাটা টোল প্লাজা, বনপাড়া বাইপাস, বনপাড়া বাজার, রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক বানেশ্বর বাজার, রাজশাহী, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক ঘোগা বটতলা থেকে মোনায়েম কনস্ট্রাকশন, ছনকা বাজার, শেরপুর মডেল মসজিদের সামনে, নয়ামাইল বাজার, মাঝিরা বাজার, ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানাধীন বনানী বাসস্ট্যান্ড, শাকপালা, বগুড়া জেলার সদর থানাধীন জিয়া মেডিকেল কলেজ গেটের সামনে, তিন মাথা লেভেলক্রসিং, চার মাথা ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে, বারোপুর বাসস্ট্যান্ড, মাটিডালি বিমানবন্দর মোড়, টিএমএসএসের সামনে, শিবগঞ্জ থানাধীন মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মোকামতলা বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মায়ামনি চৌরাস্তা মোড় থেকে গোবিন্দগঞ্জ ব্র্যাক অফিস, গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী উপজেলা পোস্ট অফিস এবং শিল্পী রেস্তোরাঁ থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পর্যন্ত, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা, পীরগঞ্জ উপজেলা বাসস্টপেজ থেকে সাসেক প্রকল্পের নির্মাণাধীন আন্ডারপাসের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত, বিশমাইল, পীরগঞ্জ, রংপুর, বড়দরগাহ আন্ডারপাস, পীরগঞ্জ, রংপুর, শঠিবাড়ী আন্ডারপাস ও শঠিবাড়ী বাজার এবং বাসস্টপেজ এলাকা, মিঠাপুকুর ও রংপুর।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৬ স্পট : ভবানীপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড, মাস্টারবাড়ী বাজার, সিড স্টোর বাজার, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪১ স্পট : কাঁচপুর মোড় ও পশ্চিম ঢাল, যাত্রামুড়া ব্রিজ, তারাব বাসস্ট্যান্ড, বরাব বাসস্ট্যান্ড, সুলতানা কামাল ব্রিজ, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, বরপা বাসস্ট্যান্ড, পাকিস্তানি (এসিএস) গার্মেন্ট, রবিন টেক্স গার্মেন্ট, ভুলতা মোড়, গোলাকান্দাইল মোড়, বান্টি বাজার, পাঁচরুখি, হুনপাড়া, পুরিন্দা বাজার, মাধবদী বাসস্ট্যান্ড, শেখের চর (বাবুরহাট), পাঁচদোনা, সাহেপ্রতাব ও ভেলানগর, ইটাখোলা মোড়, (১) মরজাল বাজার, (২) বারৈচা বাজার, (৩) নারায়ণপুর বাজার, (৪) দুর্জয় মোড় বাসস্ট্যান্ড (পৌরসভা এলাকা), আশুগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ড, বগইর বাসস্ট্যান্ড, বেড়তলা বাসস্ট্যান্ড, বিশ্বরোড গোলচত্বর, নন্দনপুর বাসস্ট্যান্ড, সুহিলপুর বাসস্ট্যান্ড, বাড়িউরা বাসস্ট্যান্ড, শাহবাজপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দুরা বাসস্ট্যান্ড, ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ড, সাতবর্গ বাসস্ট্যান্ড, মাধবপুর বাজার, অলিপুর বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ গোলচত্বর, রুস্তমপুর টোল প্লাজা, শেরপুর টোল প্লাজা ও গোয়ালাবাজার।
ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কের ৮ স্পট : আমিনবাজার, উলাইল বাসস্ট্যান্ড, সাভার থানা স্ট্যান্ড, সাভার বাসস্ট্যান্ড, সিঅ্যান্ডবি মোড়, নবীনগর বাসস্ট্যান্ড, নয়ারহাট বাসস্ট্যান্ড ও কালামপুর এলাকাকে যানজটপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে যাত্রীকল্যাণ সমিতি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিবৃতিতে জানিয়েছে-ঈদযাত্রায় পথে পথে লাখো মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমাতে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়কে গতানুগতিক সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছে। বিবৃতিতে বলেছে-মহাসড়কের যানজট নিরসনে প্রযুক্তিনির্ভর অত্যাধুনিক পদ্ধতির মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। একই সঙ্গে এহেন আনন্দ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় শত শত মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন বন্ধ করা, নিুআয়ের লোকজনের বাস-ট্রাকের ছাদে, পণ্যবাহী পরিবহণে যাতায়াত ঠেকাতে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিবৃতিতে আরও জানান, ইতোমধ্যে সারা দেশে ৭১৪টি অধিক যানজটপূর্ণ এলাকার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। ১০টি জাতীয় মহাসড়কের ২৩৮টি অতিঝুঁকিপূর্ণ দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পটের বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে।