অগ্নিঝরা মার্চ
ধানমন্ডি ৩২ যেন মুক্তিকামী মানুষের মিলনকেন্দ্র

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অগ্নিঝরা মার্চের ১৮তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১৮ মার্চও অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল ছিল গোটা দেশ। সরকারি-বেসরকারি ভবনে উড়ছে কালো পতাকা। অফিস-আদালতে অনুপস্থিত থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত সংগ্রামের কর্মসূচিকে সফল করে তোলেন। পূর্ব বাংলার সবকিছু চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর কথায়। সবাই অপেক্ষায় থাকেন বঙ্গবন্ধুর চূড়ান্ত নির্দেশনার। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত উৎসুক জনতা ভিড় করে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। মূলত পহেলা মার্চের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুর বাসভবন হয়ে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের মিলনকেন্দ্র। ১৯৭১ সালের ১৮ মার্চ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিছিলের পর মিছিল করে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ স্বাধীনতাসংগ্রামের মহানায়কের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে আসেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বারবার উঠে এসে তাদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন, তোমরা চরম প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে ঘরে সংগ্রামী দুর্গ গড়ে তোল। যদি তোমাদের ওপর আঘাত আসে, তা প্রতিহত করে শত্রুর ওপর পালটা আঘাত হেন।
সবাইকে চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, মুক্তিসংগ্রামের পতাকা আরও ওপরে তুলে ধর। সাত কোটি শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির সার্বিক মুক্তি না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাও।
এদিন বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আরও সৈন্য আনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কিছু জানেন কি না-সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার দেশের মাটিতে যা কিছু ঘটছে তার সব খবরই আমি রাখি। বঙ্গবন্ধু ও ওয়ালী-ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। বৈঠকে পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি গাউস বক্স বেজেঞ্জোও উপস্থিত ছিলেন।
রাতে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়-১৯ মার্চ বেলা ১১টায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে তৃতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁও ও মহাখালীতে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এতে মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এদিকে চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক গুলিবর্ষণ ও অন্যান্য ঘটনা সম্পর্কে সরেজমিন তদন্তের জন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যায়।
করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে আলোচনার যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঢাকা যাওয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের কাছে চাওয়া কয়েকটি বিষয়ের ব্যাখ্যা না পাওয়ায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা পাঠিয়ে গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিবৃত করার অনুরোধ জানান।