না.গঞ্জের বহু ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নাজুক
উদাসীন নগর কর্তৃপক্ষ * বহুতল ভবনে ব্যাঙের ছাতার মতো রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। এসব ভবনে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই
রাজু আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শিল্প ও বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি বহুতল ভবনে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নেই।
মেয়াদোত্তীর্ণ ফায়ার এক্সটিংগুইশার, বিকল্প সিঁড়ি অথবা পানির ব্যবস্থা ছাড়াই নগরীতে অট্টালিকা গড়ে উঠছে। বহুতল ভবনগুলোয় গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্টেও নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। এছাড়া রান্নার কাজে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করায় ভবনগুলো যেন একেকটা গ্যাস চেম্বারে রূপ নিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মালিকানাধীন অনেক বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ও বিকল্প সিঁড়ি নেই। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও উদাসীনতা, অবহেলা আর অনৈতিকতার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
ফুড জোন হিসাবে পরিচিত নগরীর বালুর মাঠ এলাকার বেশির ভাগ বহুতল ভবনে ব্যাঙের ছাতার মতো রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। অনেক ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে এক বা একাধিক রেস্টুরেন্ট আছে। এসব ভবনে ফায়ার এক্সিট বা বিকল্প সিঁড়ি তো দূরের কথা, অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। নকশা অনুমোদন না থাকার পরও অনেক ভবনের ছাদে ‘রুফটপ রেস্টুরেন্ট’ ব্যবসা চলছে।
তিতাসের গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় রেস্টুরেন্টগুলো রান্নার কাজে গ্যাস সিলিন্ডার বা এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করছে।
২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর নারায়ণগঞ্জের নগর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। শহরের বালুর মাঠ এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টকে বিকল্প সিঁড়ির ব্যবস্থা, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার নির্দেশের পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়। সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবনে এসব ব্যবস্থা নেই। করপোরেশনের ভবনগুলোর অবস্থা আরও ঝুঁকিপূর্ণ।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় সিটি করপোরেশনের বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ১২তলা সিটি মাধবীলতা প্লাজায় কোনো ফায়ার এক্সিট নেই। অগ্নিনির্বাপণের জন্য কিছু গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ বহু বছর আগে শেষ হয়েছে। ভবনের ব্যবসায়ী ও আবাসিক ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা জানান, আগুন লাগলে কী করব জানি না। বিশেষ করে চারতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক ফ্লোরে কিছুই নেই।
নগরীর টানবাজার এলাকা সবচেয়ে বেশি অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের বৃহত্তম রং, সুতা ও কেমিক্যাল ব্যবসার কেন্দ্র টানবাজারে সিটি করপোরেশনের আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন রয়েছে। এর মধ্যে পদ্ম সিটি প্লাজা-১ ও ২ ঘুরে দেখা যায়, ভবন দুটির একটিতেও ফায়ার এক্সিট অথবা হাইড্রেন্ট সিস্টেম নেই। নামমাত্র ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা হলেও সেগুলোর মেয়াদ নেই। অথচ ভবন দুটিতে অর্ধশত কেমিক্যালের দোকান, ফ্ল্যাট, ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, টানবাজার এলাকায় কেমিক্যালের গোডাউনে আগুন লাগলে তা নেভানোর সক্ষমতা ফায়ার সার্ভিসের আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশিষ্ট ছড়াকার ও গণমাধ্যমকর্মী আফজাল হোসেন পন্টি জানান, বঙ্গবন্ধু সড়কের দুইপাশের একটি ভবনেও যথাযথ অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা পাওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নেওয়ার প্রক্রিয়া পুরোপুরি ঘুসনির্ভর।
এ ব্যাপারে নাসিকের নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম জানান, ভবনের নকশা অনুমোদন ও লাইসেন্স দেওয়ার সঙ্গে নাসিকের করণীয় তেমন কিছুই নেই। তবে নাসিকের ভবনে নিরাপত্তার ঘাটতি থাকলে তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক ফখর উদ্দিন আহাম্মদ জানান, সব ক্রাইটেরিয়া মেনে লাইসেন্স দেই। তিনি বলেন, বহুতল ভবন, বিশেষ করে যেসব ভবনে রেস্টুরেন্ট রয়েছে বা গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে, সেসব ভবনের শতভাগ অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা উচিত। বিশেষ করে ফায়ার এক্সিট ও অগ্নিনিরাপত্তায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম থাকা প্রয়োজন।
নগরবাসীর দাবি, দুর্ঘটনার পর পরস্পর দোষারোপ না করে দুর্ঘটনার আগে যেন সবাই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকেন।