পাইপলাইনে এবার চট্টগ্রামে এলো ক্রুড অয়েল

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ডিজেলের সফল কমিশনিংয়ের পর এবার সাগরের তলদেশে স্থাপিত পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল সরবরাহ পরীক্ষামূলক শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক থেকে জ্বালানি ক্রুড (অপরিশোধিত) অয়েল শনিবার সকাল ৮টার দিকে পাইপলাইনে দেওয়া হয়। ৯৪ কিলোমিটার পাইপের মধ্য দিয়ে সেই তেল চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে এসে পৌঁছেছে রোববার দুপুর ১২টায়।
সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ৪০ হাজার টন ক্রুড অয়েল পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামে আনা হবে। এজন্য সময় লাগতে পারে ৪-৫ দিন। পরীক্ষামূলক হওয়ায় স্বাভাবিক ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক প্রেসারে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। যখন নিয়মিত সরবরাহ শুরু হবে তখন এ পরিমাণ তেল খালাসে সময় লাগবে দুদিনেরও কম। এর আগে ৬ মার্চ একইভাবে ডিজেলের পরীক্ষামূলক সরবরাহ সম্পন্ন হয়। সেই উদ্যোগ সফল হওয়ায় এবার ক্রুড অয়েলের পরীক্ষামূলক সরবরাহ শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। প্রকল্পে ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কিনা তা দেখতে এ কমিশনিং করা হচ্ছে।
প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এখন পরীক্ষামূলক সরবরাহ প্রক্রিয়া সফল হলে দুই-তিন মাস পর প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হবে। অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত ভাসমান বয়া বা জেটিতে খালাসের পর সাগরের তলদেশ দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল নেওয়া হবে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংকে। সেখান থেকে আরও পাইপলাইনের মাধ্যমে সেই তেল পরিশোধনের জন্য আনা হবে পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। আর এর মধ্য দিয়ে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান যুগান্তরকে বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই থেকে চার মাস পর প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হবে। গভীর সমুদ্রে মাদার ভেসেল থেকে তেল সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের মাধ্যমে খালাস করা হবে। একেকটি জাহাজে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টন তেল থাকবে। এসব জাহাজ থেকে তেল খালাসের সময় টাগবোটের সাহায্য নিতে হয়। টাগবোট প্রস্তুত করাসহ আনুষঙ্গিক আরও কিছু কাজ রয়েছে।
ইআরএল সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে মহেশখালীসংলগ্ন গভীর সমুদ্রে ভাসমান বয়া বা জেটির মাধ্যমে জাহাজ থেকে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল পরীক্ষামূলক খালাস করে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংকে রাখা হয়েছে। সেখানে সব ইকুইপমেন্ট কমিশনিংয়ের পর প্রথম দফায় পাইপলাইনে ডিজেল সরবরাহ শুরু করা হয়। দ্বিতীয় দফায় শনিবার থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩ জুলাই প্রথমবারের মতো বঙ্গোপসাগরে ভাসমান বয়া বা জেটিতে তেল খালাসের চেষ্টা করা হয়। তবে ওই সময় বয়ার পাইপলাইনে ত্রুটি দেখা দিলে তেল খালাস স্থগিত হয়ে যায়। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে ইআরএল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে একটি জাহাজ থেকে লাইটারিংয়ের মাধ্যমে তেল খালাস করতে অন্তত ১১ থেকে ২০ দিন লাগে। পাইপলাইনে এ কাজ সম্পন্ন হবে মাত্র দুদিনে। পুরোদমে পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু হলে প্রতিবছর জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা।