অগ্নিঝরা মার্চ
মানচিত্রখচিত পতাকা উড়ছে ঘরে ঘরে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অগ্নিঝরা মার্চের দশম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১০ মার্চ উত্তাল গোটা বাংলা। স্বাধীনতার প্রশ্নে উজ্জীবিত ও সংগঠিত হচ্ছিল মুক্তিকামী বাঙালি। কারণ অর্থনৈতিক বৈষম্য, শোষণ, অবিচারের শিকার বাঙালির সামনে তখন মুক্তির পথে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর থেকে সবকিছু চলতে থাকে তারই নির্দেশ মেনে। স্বাধীনতার মূলমন্ত্র বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতা বারবার প্রচার ও সম্প্রচার হতে থাকে। ঘরে ঘরে উড়ছে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা।
সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা ওড়ে। এমনকি রাজারবাগ পুলিশ লাইন, থানা ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও কালো পতাকা উত্তোলিত হয়।
১৯৭১ সালের ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সারা দেশে সরকারি ও আধা-সরকারি অফিসের কর্মচারীরা দশম দিনের মতো কাজে যোগদানে বিরত থাকেন। এদিন সকালে বঙ্গবন্ধু নিজ বাসভবনে একদল বিদেশি সাংবাদিককে বলেন, সাত কোটি বাঙালি আজ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। যে কোনো মূল্যে তারা এই অধিকার আদায়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বাঙালিরা অনেক রক্ত দিয়েছে। এবার আমরা এই রক্ত দেওয়ার পালা শেষ করতে চাই।
বিকালে ওয়ালীপন্থি ন্যাপের উদ্যোগে শোষণমুক্ত স্বাধীন বাংলার দাবিতে ঢাকা নিউমার্কেট এলাকায় পথসভা হয়। সভায় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সভাপতিত্ব করেন। ‘লেখক-শিল্পী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে লেখক ও শিল্পীরা রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালি ছাত্ররা জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করেন। ছাত্ররা নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে মহাসচিব উ-থান্টের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন।
এদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে কর্মিসভা হয়। সেখানে ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতাদের স্বাক্ষরিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক বিবৃতিতে বাঙালি সৈন্য, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি পাকিস্তানি উপনিবেশবাদী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা না করার আবেদন জানানো হয়।
বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি যে নির্দেশ দিয়েছি, সচিবালয়সহ সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস-আদালত, রেলওয়ে ও বন্দরগুলোতে তা পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ওই বিবৃতিতে বলেন, ক্ষমতাসীন চক্র প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গভীর চত্রান্তে লিপ্ত।
করাচিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য ১৩ মার্চ ঢাকায় আসবেন। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতা যাতে হন্তান্তর করা যায়, সেজন্য আগে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের চেষ্টা করতে হবে।