অগ্নিঝরা মার্চ
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর বদলে যায় দৃশ্যপট
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অগ্নিঝরা মার্চের নবম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ মিছিল-সমাবেশে উত্তাল ছিল গোটা দেশ। রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর বদলে যায় পুরো দৃশ্যপট। পূর্ব বাংলা হয়ে ওঠে মুজিবময়। সর্বাত্মক অসহযোগে স্থবির হয়ে পড়ে প্রশাসন। ফুঁসে ওঠা মুক্তিকামী বাঙালি সর্বশক্তি দিয়ে পেতে চায় স্বাধীনতার স্বাদ। ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে বিশাল জনসভায় বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন মওলানা ভাসানী। সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ চূড়ান্ত মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ স্বাধিকার আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী সচিবালয়, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাইকোর্ট, জেলা কোর্টসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে হরতাল পালিত হয়। এ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মধ্যে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিকালে পল্টন ময়দানের জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে ভাসানী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকেও তাই বলি অনেক হয়েছে, আর নয়। তিক্ততা বাড়াইয়া আর লাভ নাই। লা কুম দিনুকুম ওয়ালইয়া দিন।’ অর্থাৎ ‘তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার-এ নিয়মে পূর্ববাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করিয়া লও।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবের সঙ্গে মিলে ১৯৫২ সালের মতো তুমুল আন্দোলন শুরু করব। খামাখা কেউ মুজিবুরকে অবিশ্বাস করো না। তাকে আমি ভালোভাবে চিনি।’
এদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ছাত্রসভায় গৃহীত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। এই সভায় আরেকটি প্রস্তাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বাংলাদেশে জাতীয় সরকার’ গঠনের জন্য অনুরোধ করা হয়।
পিআইএ-এর বাঙালি কর্মচারীরা তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলে তিনি তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ রাত ৯টা থেকে রাজশাহী শহরে ৮ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে। রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিদিন রাত্রিকালীন কারফিউ জারির পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণার পর রাজশাহীতে হঠাৎ সান্ধ্য আইন জারির কারণ বোধগম্য নয়। বিবৃতিতে অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি পরিবর্তন করে সামরিক শাসন পরিচালক পদে লে. জে. টিক্কা খানের নিয়োগ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ৬ মার্চ টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা থেকে বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নিতে বিভিন্ন দেশ থেকে বিমানের ঢাকায় অবতরণ শুরু হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট প্রয়োজনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘের স্টাফ ও তাদের পরিবারকে প্রত্যাহারের জন্য ঢাকায় জাতিসংঘের উপ-আবাসিক প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জার্মান, জাপান, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া তাদের নাগরিকদের ঢাকা থেকে দ্রুত নিজ নিজ দেশে পাঠাতে শুরু করে।