কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচন
সাক্কু-সূচনা মুখোমুখি অবস্থানে, উত্তেজনা
তাবারক উল্যাহ কায়েস ও আবুল খায়ের, কুমিল্লা
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং মহানগর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. তাহসীন বাহার সূচনা মারমুখী অবস্থানে রয়েছেন। এ দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা যে কোনো সময় সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মাঝে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এতে নগরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে হেভিওয়েট এ দুই প্রার্থীর স্নায়ুযুদ্ধের ফাঁকে বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ সিটি এলাকার সাক্কু সমর্থিত আরও ৮ শতাধিক কর্মী-সমর্থক ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজামের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
এর আগে সাক্কুর সেকেন্ড ইন কমান্ড মহানগর যুবদলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বদরুল হাসান রাব্বুর নেতৃত্বে ৫ শতাধিক কর্মী-সমর্থক নিজামের সঙ্গে যোগ দেন। অপরদিকে নিজ কন্যা তাহসীন বাহার সূচনার পক্ষে প্রচার না চালাতে সংসদ-সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে শেষ মুহূর্তে মাঠের পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিতে পারে। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ভোটের আগমুহূর্তে মাঠের আধিপত্য এবং ভোটকেন্দ্রের আশপাশ দখলে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট তিন প্রার্থী। ভোটের মাঠে মারমুখী অবস্থানে রয়েছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু এবং বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসীন বাহার সূচনাসহ তাদের কর্মী-সমর্থকরা। এরই মাঝে এ দুই প্রার্থীই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। ভোটের মাঠেও চালিয়ে যাচ্ছেন বাগ্যুদ্ধ। প্রচারের শেষমুহূর্তে এ দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এরই মাঝে সাক্কুর ১৩ শতাধিক কর্মী-সমর্থক নিজামের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। স্থানীয়দের ধারণা, এ নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। তিন প্রার্থীই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের অবস্থানে রয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, সাক্কু ও সূচনা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। আমরা এসব বিষয় খতিয়ে দেখছি। কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতা যাতে করতে না পারে, সেদিকে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এ লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সংসদ-সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে নিজ কন্যার পক্ষে প্রচার না চালাতে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
শেষ মুহূর্তের প্রচার : এদিকে শেষ মুহূর্তের প্রচারে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন চার প্রার্থী। প্রচারে একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। বিশেষ করে সংসদ-সদস্য বাহাউদ্দিনের একসময়ের মিত্র সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম এবং বাহারকন্যা সূচনার মধ্যে চলছে কথার লড়াই। আর তিনজনকেই সংসদ-সদস্য বাহারের প্রার্থী হিসাবে আখ্যা দিচ্ছেন নিজাম উদ্দিন কায়সার।
উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করব-সূচনা : বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসীন বাহার সূচনা বলেছেন, নির্বাচিত হলে উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করব। কুমিল্লার মানুষকে বাবার মতো আমিও ভালোবাসব। নগরবাসীর মৌলিক সমস্যাগুলো নিরসনে কাজ করব। আমি কথায় বিশ্বাসী না। কাউকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিতে শিখিনি। সহিংসতা নয়, আমি শান্তির কুমিল্লায় বিশ্বাসী। কুমিল্লার মানুষের ভাগ্যবদল এবং তিলোত্তমা নগরী গড়াই আমার লক্ষ্য। বুধবার নগরীর বাগিচাগাঁও ও অশোকতলা এলাকায় গণসংযোগে সূচনা এসব কথা বলেন। বিকালে তিনি হোচ্চা মিয়া হাইস্কুল, চকবাজার, বাগানবাড়ি, সালাউদ্দিন মোড়, ধনাইতরী মাদ্রাসায় পৃথক উঠান বৈঠক করেন।
সূচনা, সাক্কু, তানিম সংসদ-সদস্য বাহাউদ্দিনের প্রার্থী-নিজাম : ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, তাহসীন বাহার সূচনা, মনিরুল হক সাক্কু ও নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম সংসদ-সদস্য বাহাউদ্দিনের প্রার্থী। তারা পাশ করলে বাহাউদ্দিনের পক্ষেই কাজ করবে। কুমিল্লার মানুষ দানবীয় শাসন থেকে মুক্তি পাবে না। এখন নতুন কুমিল্লার স্বপ্নে বিভোর নগরবাসী। আমি নতুন কুমিল্লা গড়তে চাই। তিনি বলেন, যারা ১২ বছর কুমিল্লার মানুষকে লুটেপুটে খেয়েছে, তারা আবার কুমিল্লার মানুষকে বোকা বানাতে পরিকল্পনা করছে। এ পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না। তিনি বলেন, এ নির্বাচন আগের কোনো নির্বাচন নয়। এবার বিএনপি আছে নির্বাচনে। আপনাদের ভোটের অধিকার রক্ষায় আমি আমার জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করব। আপনারা কেন্দ্রে আসবেন। আর এ গণজোয়ার অব্যাহত রাখবেন। বুধবার নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন। বিকালে তিনি নগরীর শুভপুর, নূরপুর, গুদোরপুকুর পাড়, উত্তর রামপুর এলাকায় পৃথক উঠান বৈঠক করেন। এ সময় বিএনপি নেতা শফিউল আলম রায়হান, বকুল, যুবদল নেতা ইউসুফ, জহির, পিটার, সাজুসহ স্থানীয় কয়েক শ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে সুযোগ চাই-সাক্কু : টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আপনাদের ভোটে বারবার নির্বাচিত হয়েছি। কুমিল্লাকে অন্ধকার থেকে আলোকিত করেছি। আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে নগরবাসীর কাছে আবারও সুযোগ চাই। আমাকে ভোট দিলে নগরভবন সংসদ-সদস্য বাহাউদ্দিনের পেশিশক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।
আমিও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী-তানিম : হাতি প্রতীকের প্রার্থী এবং মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সংসদ-সদস্য বাহারের পৈতৃক সম্পদ নয়। এটি একটি আদর্শের প্ল্যাটফরম। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শের দল। যে মেয়ে ছাত্রজীবনে কখনো রাজনীতি করেননি, তিনি কীভাবে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি করেন। তিনি বলেন, সংসদ-সদস্য বাহার প্রভাববিস্তার করে নিজের মেয়েকে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এতে ত্যাগী ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বহু নেতাকর্মী নিগৃহীত হচ্ছে। বর্ধিত সভায় এভাবে প্রার্থী ঘোষণার কোনো নিয়ম নেই। আমিও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আমার সঙ্গে দলের বড় একটি অংশ রয়েছে। বুধবার নগরীর মনোহরপুর ও রাজগঞ্জ এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, ৯ মার্চ কুসিকের মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
কুসিক নির্বাচনে তানিমের ইশতেহার ঘোষণা : কুমিল্লাকে যানজটমুক্ত সবুজ ছায়াঘেরা এক মায়াময় নগরী হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা শেষ হওয়ার আগের দিন বুধবার বিকাল ৫টার দিকে নিজ বাসভবনে ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। নির্বাচনে তিনি হাতি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ঘোষিত ইশতেহারে তানিম উল্লেখ করেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে ১০০ বছরের উপযোগী করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করবেন, যে পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।