ধরাছোঁয়ার বাইরে উদীচী হত্যাযজ্ঞের ঘাতকরা
যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের আড়াই দশকেও ঘাতকরা শনাক্ত হলো না। দীর্ঘ ২৫ বছরেও দেশের প্রথম জঙ্গি হামলার এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। গত ১৪ বছর ধরে উচ্চ আদালতে আপিল শুনানিতে ঝুলে আছে মামলার বিচারিক কার্যক্রম। শুনানি শেষে জড়িতদের বিচার কার্যক্রম কবে শুরু হবে তা জানেন না কেউ। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রতি বছরই বলছেন, তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন মামলাটির কার্যক্রম শুরু করার। এমনই পরিস্থিতিতে আজ নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর পূর্তি হচ্ছে।
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে শক্তিশালী দুটি বোমা হামলা চালানো হয়। বোমার আঘাতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত ও আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ আহত হন। নিহতরা হলেন-নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, নূর ইসলাম, ইলিয়াস মুন্সী, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম মিলন, মোহাম্মদ বুলু, রতন কুমার বিশ্বাস, শাহ আলম পিন্টু ও বাবু রামকৃষ্ণ। দীর্ঘদিনেও বিচার না হওয়ায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও ছেড়ে দিচ্ছেন বিচারের আশা।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে একটি পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পরবর্তী সময়ে সেই আওয়ামী লীগ আরও চারবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এত বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হলো না। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কথা বলি। সেই স্বাধীনতার পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকতেও যখন বিচার হয় না, তখন খুব কষ্ট লাগে। আমি মনে করি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হবেই।’
আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়। ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
এদিকে দেশের আলোচিত জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান আটক হওয়ার পর পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার কথা স্বীকার করে। তার ওপর ভিত্তি করে এ মামলার পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যান এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। এ প্রসঙ্গে যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রীস আলী বলেন, উদীচী হত্যা মামলাটি উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে আকর্ষণ করেছিলাম। কিন্তু আজও এই শুনানি হয়নি। আপিল শুনানি নিষ্পত্তি না হলে নিম্ন আদালতে বিচার কাজ শুরু সম্ভব নয়। এদিকে উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার থেকে দুদিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়ে সংগঠনটি। কর্মসূচির প্রথমদিন মঙ্গলবার বিকালে সাংবাদিক ও সংস্কৃতিজনের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৬ মার্চ বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে এবং বিকালে টাউন হল ময়দানে প্রতিবাদী মৌন মিছিল, আলোচনা সভা, শহিদবেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মশাল প্রজ্বালন এবং প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচি রয়েছে।