কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচন
আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি সূচনা তানিমের, বিএনপিতে বিভ্রান্তি
কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি করছেন ডা. তাহসীন বাহার সূচনা এবং নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম। আর বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পাওয়া গেলেও নিজেদের প্রার্থী দাবি করে প্রচার চালাচ্ছেন দল থেকে বহিষ্কৃত নিজাম উদ্দিন কায়সার এবং মনিরুল হক সাক্কু। প্রচারে চার প্রার্থীই দলের নাম ব্যবহার করছেন। এতে সাধারণ ভোটার এবং সচেতন মহল কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। তারা প্রশ্ন তুলছেন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মূল প্রার্থী আসলে কে?
সরেজমিন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ উপনির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগ এক বর্ধিত সভায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনাকে দলীয় প্রার্থী হিসাবে সমর্থন দিয়েছে। এতে মহানগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের বেশির ভাগ নেতাকর্মী বাস প্রতীকের এ প্রার্থী নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামেন। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হাতি প্রতীকের প্রার্থী নুর উর রহমান মাহমুদ তানিমের দাবি, বর্ধিত সভায় একক প্রার্থী ঘোষণা করা দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। তিনি নিজেকে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম বলেন, তাহসীন বাহার সূচনা আমাদের দলীয় প্রার্থী। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো কারণ নেই। আওয়ামী লীগ এবং দলের অঙ্গ সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী সূচনার সঙ্গে থেকে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্য কেউ মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি করা যুক্তিযুক্ত নয়।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। তবে ২০২২ সালের সিটি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় আজীবন বহিষ্কৃত মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারের পক্ষে মাঠে নেমেছেন মহানগর এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কায়সারের পক্ষে মাঠে ব্যাপক গণসংযোগ এবং প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মহানগর এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক এবং ছাত্রদল। তরুণ প্রজন্মের এ প্রার্থীকে নিয়ে তারা উৎসবমুখর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপনির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, মেয়র নির্বাচন করায় দল আমাকে বহিষ্কার করলেও দলের চলমান আন্দোলন সংগ্রামে সব সময় আছি এবং থাকব। দলের এ দুর্দিনে আন্দোলন সংগ্রামে থাকায় দলের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা আমার নির্বাচনি প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন।
অপর দিকে বিএনপির বহিষ্কৃত আরেক নেতা সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও নিজেকে বিএনপির প্রার্থী দাবি করে প্রচার চালাচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে দেখা না গেলেও নিজস্ব বলয়ের কর্মী সমর্থকই তার ভরসা। মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমার সঙ্গে বিএনপির একাংশ রয়েছে। তারা মাঠে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমি কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করিনি।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান ছুট্টি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে ঘোষণা দিতে না পারলেও নেতাকর্মীদের একাট্টাই প্রমাণ করে কায়সার বিএনপির প্রার্থী। সাক্কু কখনো দলের আদর্শের মধ্যে ছিলেন না। তিনি সবসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপির ক্ষতি করেছেন। তাকে দলের কোনো নেতাকর্মী বিএনপির প্রার্থী মানে না। সাক্কুর সঙ্গে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী নেই।
তবে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে বিএনপি নেই। কোনো প্রার্থীর সঙ্গেও সম্পৃক্তা নেই। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক যে দুই নেতা মেয়র পদে নির্বাচন করছেন; এটা একেবারে তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে।
একই মন্তব্য করেছেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া। তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের কোনো প্রার্থী এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। যে দুজন নির্বাচন করছেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাদেরকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।