Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দুটি মামলায় অব্যাহতি

বিনাদোষে খাদিজার জীবন থেকে ঝরে গেল ১ বছর

Icon

আলমগীর হোসেন

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিনাদোষে খাদিজার জীবন থেকে ঝরে গেল ১ বছর

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আরেকটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কুবরা। বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াৎ এ আদেশ দেন।

এর আগে, আরেকটি মামলায় অব্যাহতি পান খাদিজা। ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট তিনি গ্রেফতার হন। এক বছর পর জামিনে মুক্ত হন। বিনাদোষে তার জীবন থেকে একটি বছর ঝরে গেছে। কে ফিরিয়ে দেবে তার এই মূল্যবান সময়।

দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খাদিজা কোনো দুর্ধর্ষ অপরাধী নন। ছাত্রজীবনে তিনি কোনো অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এরকম প্রমাণও সরকারের কাছে নেই। তার পরও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাকে এক বছর ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়। তারা মনে করেন, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই শাস্তি দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

দেশে শতকরা ২০ ভাগ ক্রিমিনাল মামলায় আসামি দোষী সাব্যস্ত হয় না। ৮০ শতাংশ মামলার ক্ষেত্রে আসামি খালাস পেয়ে যায়। এতে একজন মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায়। এসব আইন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে গেছে বলেও তারা মন্তব্য করেন। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করলেই অপরাধী হয় না-মনে করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি যুগান্তরকে বলেন, একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারবে।

এখন খাদিজার ক্ষেত্রে দেড় বছর পর দেখা গেল সে নির্দোষ, অপরাধ করেনি। এই দেড় বছরে তার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এখন কথা হলো-পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করলেই কি অপরাধী হয়ে গেল? তার তো অপরাধ প্রমাণ নাও হতে পারে। পুলিশ সন্দেহের বসে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে।

পরে সন্দেহটা যদি অমূলক হয় বা পরে তদন্ত করে কিছু পাওয়া গেল না, তখন ওই ব্যক্তির জীবনে যেন ক্ষতি না হয়। তিনি বলেন, এ কারণে এসব ক্ষেত্রে পশ্চিমাবিশ্ব জামিন সিস্টেম করে রেখেছে। তবে দুই-চারটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ব্যতিক্রম আছে, যেমন কেউ বাইরে থাকলে সমাজের আসলেই ক্ষতি হবে, তাকে আদালত জামিন দিল না।

বিশিষ্ট আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী জেড আই খান পান্না বলেন, ১৮৬০ দণ্ডবিধি আইনে আমরা এখনো চলছি। বিট্রিশদের গড়া বিচারব্যবস্থা এখনো চলছে। বিচারের আগেই শাস্তি। শুধু খাদিজা কেন এমন অহরহ ঘটনা ঘটছে। ঝুমন দাস, রসরাজ তাদেরও তো একই অবস্থা। ২০১৬ সাল থেকে হাজিরা দিচ্ছে। আর কেউ যেন খাদিজাতুল কুবরা না হন সেই কামনা করি।

খাদিজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতেন। তার একটি অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন। সেটাই খাদিজার জন্য কাল হলো। অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ।

এজাহারে বলা হয়, বাদী ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশের বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।

খাদিজার বিরুদ্ধে যখন মামলা হয়, জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৮ বছরের নিচে।

সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি শিশু আইনেই প্রতিকার করতে হবে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিচারিক আদালতে দুবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি তার জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম