Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সমন জারি হলেও আসে না সাক্ষী

বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত বাড়ছে মামলা জট

আট মাসে ৩০ হাজারের বেশি সমন * সাক্ষীকে খরচ দেওয়ার বিধান থাকলেও বাস্তবায়ন নেই

মহিউদ্দিন খান রিফাত

মহিউদ্দিন খান রিফাত

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত বাড়ছে মামলা জট

ঢাকার নিম্ন আদালতে মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ, জবানবন্দি ও জেরার জন্য গত বছরের জুন থেকে এ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি সমন জারি করা হয়েছে।

তবে জারি হওয়া সমনের অর্ধেকেরও কম তামিল হয়। সাক্ষী না আসায় অনেক মামলার তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়। সাক্ষীর অনুপস্থিতির কারণে বেশিরভাগ ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকার বিভিন্ন মামলায় সারা দেশে ৩০ হাজারের বেশি সমন জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ঢাকার ৫০ থানায় সমন জারি করা হয়েছে ৬ হাজার ৮৬ জনের নামে।

তাদের মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির হয়েছেন মাত্র তিনজন। আদালত প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ সমন জারি করেন। কিন্তু হাজির হওয়ার সংখ্যা ২৫০ থেকে ৩০০। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যই প্রায় ৯৫ শতাংশ। সাধারণ সাক্ষীর সংখ্যা ৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতের সমন শাখার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য যুগান্তরকে বলেন, সাক্ষীরা আদালতে এসে সাক্ষ্য প্রদান করাকে সময় ও অর্থের অপচয় বলে মনে করেন। সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হতে যে খরচ হয়, তা সাক্ষীকে প্রদানের বিধান থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ট্র্যাজেডির ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কারখানা মালিক দেলোয়ারসহ কয়েকজন কারখানা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় দুটি আলাদা মামলা করেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশ দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। মামলা দুটি বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ এ চলমান রয়েছে।

শ্রমিক নেতাদের লাগাতার দাবির মুখে এখন পর্যন্ত মামলায় ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে শুধু ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। মামলার আসামিরা সবাই জামিনে আছেন। মর্মান্তিক এ অগ্নিকাণ্ডে ১২২ জন শ্রমিক প্রাণ হারান।

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পিপি কাজী শাহানারা ইয়াসমিন বলেন, তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের মামলায় সাক্ষীদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য পরোয়ানা জারি করেও তাদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না।

গত বছরের ২০ আগস্ট পুলিশ সাক্ষী হাজির হওয়ার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর এক নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনায় বলা হয়, সারা দেশে বিচার চলমান থাকা মামলাগুলোয় পুলিশ সদস্যদের সাক্ষ্য প্রদানের দিন ধার্য থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ সাক্ষীরা মামলার তারিখে অনুপস্থিত থাকেন।

ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় অনাকাক্সিক্ষত বিলম্ব হয়। তাই যথাসময়ে পুলিশ সাক্ষী হাজির নিশ্চিত করতে বিনা কারণে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আদালতসংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশে প্রায় ৩৮ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা সাধারণ সাক্ষীদের হাজির করতে পারেন না। আর যেসব সাধারণ সাক্ষী হাজির হন তাদের বেশিরভাগই সাক্ষ্য দেন যে পুলিশ সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। বর্তমানে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মামলা কোনো কিছু উদ্ধারজনিত। এসব মামলার বাদী পুলিশ।

তবে সদর দপ্তরের নির্দেশনার পর পুলিশ সাক্ষীর হাজির হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। অনেক মামলায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পথচারী, পান-সিগারেট দোকানদার এমন ব্যক্তিদের সাক্ষী করে থাকেন। পরে আদালত সমন জারি করলে তারা আসেন না। অনেকের খোঁজ মিলে না। ফলে হত্যা, ধর্ষণ এবং মাদকদ্রব্য বিষয়ক গুরুতর অপরাধের মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে কম।

এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, মামলা করার সময় বাদী বা পুলিশের যে আগ্রহ থাকে, সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক তেমন অনীহা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিতে গড়িমসি করা হয়। পুলিশ সাক্ষীরা কর্মস্থল থেকে বদলি হওয়ার পর পূর্ববর্তী কর্মস্থলের মামলায় সাক্ষ্য দিতে বিলম্ব করে।

এসব কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয় এবং মামলা জট তৈরি হয়। এসব ক্ষেত্রে আদালতকে আরও কঠোর হতে হবে। সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে কোনো আইনগত দুর্বলতা থাকলে সেগুলো দূর করতে হবে এবং আইনে নির্ধারিত সময়ে বিচার শেষ করতে সচেষ্ট হতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম