সারা দেশে পুকুর ও খাল উন্নয়ন প্রকল্প
অগ্রগতি ধীর হলেও বিদেশ সফর শেষ
৬ বছরে বাস্তবায়ন ৪১ শতাংশ * নতুন করে ব্যয় বেড়েছে ২ বছর * এটা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়-ড. জাহিদ হোসেন
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
৬ বছরের প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন হয়েছে ৪১ শতাংশ। এক হাজার ৫৯৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪২৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা। কিন্তু প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ ভ্রমণ শেষ হয়েছে শতভাগ। অর্থাৎ সংকটময় সময়েও এ খাতে ৪৮ জন কর্মকর্তার জন্য খরচ হয়েছে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এদিকে নতুন করে বাস্তবায়ন মেয়াদ বেড়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর। ‘সারা দেশে পকুর, খাল উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে এ মেয়াদ বাড়ানো হয়। সম্প্রতি এটি অনুমোদন দেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। ১৮ জানুয়ারি সেক্টর ডিভিশন থেকে জারি করা হয়েছে জিও (সরকারি আদেশ)। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বিদেশ সফর প্রসঙ্গে কথা হয় পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হকের সঙ্গে। মঙ্গলবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, বিদেশ সফরের অংশ ভোগ করা শেষ হয়েছে। কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাবে এটি উল্লেখ করতে হয় বলে এখন এই ব্যয় ধরা আছে। তারপরও বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আকতার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণ তো বন্ধ আছে। এই খাতে টাকা ব্যয় হওয়ার কথা নয়। কেননা সরকারি টাকা ইচ্ছে করলেই ব্যয় করা যায় না। তবে এমন হতে পারে আন্তঃখাত সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অর্থ হয়তো অন্য কোনো খাতে ব্যয় হয়েছে। যদিও বিষয়টি আমার জানা নেই। তবুও এমনটা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, প্রশিক্ষণের দরকার আছে। এটা না থাকলে দক্ষতা বাড়বে কিভাবে?
সূত্র জানায়, পুকুর ও খাল উন্নয়ন প্রকল্পে প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ সফরের জন্য মূল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ২৪ জনের সংস্থান থাকলেও প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে তা বাড়িয়ে করা হয় ৪৮ জন। এ খাতে মূল অনুমোদিত বরাদ্দ এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় দুই কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রথম থেকেই প্রকল্পে ধীরগতি ছিল। এটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন। কিন্তু এ সময়ে অগ্রগতি কম হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতে গতি খুব বেশি বাড়েনি। ফলে এখন দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। প্রথম সংশোধনের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার ৭৫৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তবে এবার সর্বশেষ সংশোধনীতে এসে ১৬২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কমিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৯৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো পুকুর খননের মতো প্রকল্পে বিদেশ সফরের দরকার কি ছিল? আমরা ওই সময়ই (প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীর সময়) প্রশ্ন তুলেছিলাম। এরপর আবার সার্বিক অগ্রগতির দিকে নজর কম থাকলেও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় ঠিকই হয়েছে। এটা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। তবে খতিয়ে দেখতে হবে কারা কারা এবং কী বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারা ফিরে এসে প্রকল্পের কী কাজে লাগছেন। এটা জানা দরকার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পটিতে ধীরগতি কেন সেটিও দেখা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত ছিল। সেটি না করে তাদের ইচ্ছেমতো মেয়াদ বাড়ানোটা কতটা যৌক্তিক?
প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশিদ বলেন, এটা দুঃখজনক। কেননা প্রথমেই মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের দেখা উচিত ছিল এ ধরনের প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল কিনা। দ্বিতীয়ত, এই সংকটময় সময়ে যখন জিও জারি হয়েছিল তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এটি চেক করতে পারত। তৃতীয়ত, সার্বিকভাবে প্রশিক্ষণ বা যে কোনো অজুহাতেই হোক উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করা উচিত। পরিকল্পনা কমিশন এসব বিষয়ে আরও সতর্ক হতে পারে।