বিজিপি সদস্যদের সমুদ্রপথে মিয়ানমারে পাঠানো হবে: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দেশটির সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ (বিজিপি) বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানান, নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গভীর সমুদ্রপথে সদস্যদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
বাংলাদেশে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলা হলেও কীভাবে বিজিপি সদস্য ও অন্যরা ঢুকছে-এমন প্রশ্নের জবাবে সেহেলী সাবরীন বলেন, দেশটির নিয়মিত বাহিনী বিজিপি সদস্যদের আশ্রয় দেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া এক করে দেখা ঠিক হবে না। আশ্রিত বিজিপি সদস্যদের নিরাপদে দ্রুত প্রত্যাবাসন এখন প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এখানে বিমান বা নৌরুটের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয় অথবা পূর্বশর্তও নয়। যত দ্রুত তাদের প্রত্যাবাসন করা যায়, সেই বিবেচনায় বিমানে বিজিপি সদস্যদের নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে ভারত থেকে মিয়ানমার বিমানযোগে তাদের সেনা সদস্যদের ফেরত নিয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ বিমানযোগে সেনাদের ফেরত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কারণ, বাংলাদেশ চায়-দ্রুততম সময়ে তাদের প্রত্যাবাসন। এখানে সময়ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। জরুরি হলো-তাদের দ্রুত ও নিরাপদে ফেরত পাঠানো। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অথবা রাজনৈতিক কোনো কারণ থাকার প্রশ্ন অবান্তর। সম্প্র্রতি ভারতেও মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছিল। ভারত থেকে তারা নিজ দেশে ফিরে গেছে। তিনি বলেন, একটি নিয়মিত বাহিনীর বিপদগ্রস্ত সদস্য হিসাবে তারা বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছে। তবে প্রথমদিন থেকে মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে আসছে।
পালিয়ে আসা সেনাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেন, নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বুধবার বিকালে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ দফায় আসা বিজিপিসহ সবাইকে দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস বৈঠকে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে-দ্রুতই তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যাবে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর বিষয়ে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে সরকার। আর বিজিপি সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার সঙ্গে রোহিঙ্গা ঢলের কোনো সম্পর্ক নেই। বিজিপি সদস্যদের পাঠানোর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কোনো সম্পর্ক নেই।
মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধে বাংলাদেশ যে কঠিন ভূরাজনৈতিক সমীকরণের মধ্যে পড়েছে, তা থেকে উত্তরণে কী ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে জানতে চাইলে সেহেলী সাবরীন বলেন, এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত। তবে এতে বাংলাদেশের জনগণ, সম্পদ অথবা সার্বভৌমত্ব যাতে কোনোভাবে হুমকিতে না পড়ে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সুবিধাজনক সময়ে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সতর্ক। এছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে নিউইয়র্কের স্থায়ী মিশন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে।
প্রতিবেশী হিসাবে বাংলাদেশ মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা দেখতে চায় জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসাবে মিয়ানমারের শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চায় বাংলাদেশ। মিয়ানমার সংকট উত্তরণে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যে কোনো উদ্যোগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অনিবার্যভাবে থাকা প্রয়োজন বলে মনে করে বাংলাদেশ।