কানুনগো পদে পদোন্নতির উদ্যোগ
অনিয়মের অভিযোগ গ্রেডেশন প্রস্তুতিতে
আমিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন মাঠ প্রশাসনে উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (কানুনগো) পদে পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রেডেশন প্রস্তুতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, সামান্য ত্রুটির অজুহাতে অনেকের নাম গ্রেডেশন তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গত ২৮ জানুয়ারি পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এর আগে গ্রেডেশন তালিকা প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) পাঠানো হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন শাখার যুগ্ম সচিব মমতাজ বেগম যুগান্তরকে বলেন,পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সার্ভেয়ার, ড্রাফটম্যান এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের কাছে এসিআরসহ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে।
প্রায় দুই বছর ধরে তাদের একাধিকবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও সব কাগজপত্র দেয়নি। অনেকেই ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। পিএসসির কঠোর নির্দেশনা রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ এসিআরে পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। এরপরও যে কজনের কাগজপত্র পাওয়া গেছে তা সরকারি কর্ম কমিশনে পাঠিয়েছি।
পিএসসি যদি সঠিক মনে করে পদোন্নতি দেবে। আর যাদের নাম গ্রেডেশন তালিকাভুক্ত করা হয়নি, আমাদের কাছে মনে হয়েছ তাদের কাগজপত্রে ঝামেলা আছে। এখন তারা নানা জায়গায় অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে।
কানুনগো পদটি আগে তৃতীয় শ্রেণির পদ ছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় পদটি ২০০৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ প্রশাসনে সার্ভেয়ার, ড্রাফটম্যান এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিবারই পদোন্নতিপূর্ব গ্রেডেশন তালিকা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এবারেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতির জন্য ১৩০ জন সার্ভেয়ার, ৫ জন ড্রাফটম্যান এবং ৫৩ জন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা থেকে কানুনগো পদে পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
আবার বাদ পড়েছেন শতাধিক সার্ভেয়ার, ড্রাফটম্যান এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা। বঞ্চিতদের তরফ থেকে সরকারি কর্ম কমিশনের কাছে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়, কিছু করণিক ভুল অনেকের এসিআরে ছিল। পরবর্তী সময়ে তা সংশোধন করে পরিচ্ছন্ন এসিআরের কপি ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনে পৌঁছানো হয়েছে। সব সঠিক থাকার পরও তাদের নাম বাদ দিয়ে গ্রেডেশন তালিকা প্রস্তুত করে পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সার্ভেয়ার, ড্রাফটম্যান এবং তহশিলদার যুগান্তরকে বলেন, শাখা কর্মকর্তারা আমাদের কোনো কথাই শোনেন না। কথা বলার আগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। তাদের একজন বলেন, তাদের (শাখা কর্মকর্তা) খারাপ ব্যবহারের কারণে যা বলতে চাই বলা হয় না। লিখে দিলেও তা আমলে নেওয়া হয় না। আমাদের ভুল হতে পারে, কাগজপত্রে ত্রুটি থাকতে পারে। কটাক্ষ করে তো তা সমাধান হবে না। বুঝিয়ে দিতে হবে। সঠিক পদ্ধতিটা বলে দিতে হবে।
তারা আরও জানান, এসিআরসহ যাবতীয় কাগজপত্র যাছাই হয় ভূমি মন্ত্রণালয়ে। আমরা তো সেখানে যেতে পারি না। আমরা কী কাগজপত্র দিলাম আর কর্মকর্তারা কী বুঝলেন তা অন্ধকারে থেকে যায়।
সার্ভেয়ার, ড্রাফটম্যান এবং তহশিলদাররা পিএসসির কাছে দেওয়া আবেদনে উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে তৈরি গ্রেডেশন তালিকায় যাদের এসিআর সঠিক ছিল, এখন এসে বলা হচ্ছে তাদের এসিআর ত্রুটিপূর্ণ। গ্রেডেশন তালিকার ৪৪, ৪৭, ৭২, ৭৩, ৭৫ ও ৮৩ নং ক্রমিকের এসিআর ত্রুটিপূর্ণ। অথচ তাদের গ্রেডেশনের তালিকাভুক্ত করে পদোন্নতির জন্য পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে।
পিএসসিতে পাঠানো গ্রেডেশন তালিকার ২৪ এবং ২৫ ক্রমিকের ব্যক্তির নাম যথাক্রমে বশিরুল্লাহ এবং আব্দুল খালেক খান। তাদের এসিআর অসম্পন্ন এবং অংশিক লেখা আছে। ক্রমিক ৪৮ থাকা ব্যক্তির নাম মো. মনির হোসেন, তার এসিআর আংশিক এবং অসম্পূর্ণ লেখা আছে।