Logo
Logo
×

শেষ পাতা

শীতে থরথর উত্তর

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শীতে থরথর উত্তর

দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা প্রতিদিনই বাড়ছে। তাপমাত্রার পারদ কমতে কমতে নেমেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। রোববার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এটিই মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এদিন রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, নাটোর ও পাবনায়ও তীব্র শীত অনুভূত হয়েছে। এরমধ্যে চার জেলায় ছিল মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শীতের দাপটের সঙ্গে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় উত্তরের জনপদে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। কাজের সন্ধানে বের হতেও পারছেন না। অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদিকে কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পঞ্চগড় : তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর‌্যাবেক্ষণাগারে সকাল ৯টায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি। শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি। পর‌্যাবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, সকালে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও কুয়াশা কেটে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সাম্প্র্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে ২০১৮ সালে। ওই বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, শীতে হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিয়ে প্রচুর রোগী আসছে। বিশেষ করে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের নোহলিয়া পাড়া ও মালাদাম এলাকার বোরো চাষি আব্দুর রাজ্জাক, আমিনার রহমান, বরকত আলি জানান, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করেছেন তারা, কিন্তু বীজতলার অভাবে চারা রোপণ করতে পারছেন না। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, গাছ হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দফায় পাওয়া প্রায় ৩৬ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জরুরি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

দিনাজপুর : আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, দিনাজপুরে রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তিনি বলেন, শনিবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে সকাল ১০টায় শহরে কাজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ট্রাকের মালামাল লোড-আনলোড শ্রমিক আব্দুস সালাম। কোতোয়ালি থানার সামনে বসে থরথর করে কাঁপছিলেন তিনিসহ আরও ৮-১০ শ্রমিক। তারা জানান, কাজ করে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ টাকা রোজগার হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন কোনো কাজ নেই। এতে দুর্বিষহ দিন কাটছে তাদের।

দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. এএইচএম বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩৮ জন এবং শ্বাসতন্ত্রেও সংক্রমণজনিত করনে ৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে ১ হাজার জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ২ হাজার ৭৭৯ জন।

রাজশাহী : রোববার ভোর ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটি এবারের মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এদিকে তাপমাত্রা কমলেও খোলা ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এক্ষেত্রে দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, সকালে তাপমাত্রা একটু কম থাকলেও দুপুর ১২টার মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে। আকাশে রোদ আছে, সমস্যা হচ্ছে না। সে কারণে স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. নাসির উদ্দিন বলেন, স্কুল তো খোলে সকাল ১০টায়। আর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ভোর ৬টায়।

মাউশির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, শীতের কারণে স্কুল বন্ধ নিয়ে মাউশির নতুন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে আগের চিঠি মোতাবেকই স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম : রোববার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১১ দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কুড়িগ্রামের হাসপাতাল পাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, এ বছর শীতের চিত্রটা ভিন্ন। গত এক যুগে এমন পরিস্থিতি দেখি নাই। শীতের সঙ্গে প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস। ধরলার পাড়ের মোস্তাক মিয়া বলেন, ঠান্ডায় কাজ করা খুব কষ্ট। হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় পানি, ইট, বালু, সিমেন্টের কাজ করি। কী করব কাজ না করলে তো আর সংসার চলবে না।

পাবনা : জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু বন্ধের ঘোষণা না দেওয়ায় প্রচণ্ড শীতেও শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে হয়। পরে দুপুর ১টায় জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়া হয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে যথারীতি ক্লাস হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মো. ইউসুফ রেজা জানান, আমরা নির্দেশনা পাওয়ার পর দুপুরে বাচ্চাদের ছুটি দিয়েছি। এদিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগী। ২৪ ঘণ্টায় এসব হাসপাতালে ২ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে।

কাউনিয়া( রংপুর) : কনকনে শীতের কারণে কাউনিয়া উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম আবারো ২ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার সকালে কাউনিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোছা. শায়লা সাঈদ এ তথ্য জানান।

লালপুর (নাটোর) : লালপুরে রোববার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা এ মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম