বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরির যাত্রা
সাগর নীলে বর্ণিল নগরী
খাবারের অর্ধশত দোকান, বার, ওয়াটার স্লাইড, সুইমিংপুল, হ্রদ, জলপ্রপাত, পার্ক, গাছপালা- বিনোদনের সবই আছে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাগরে ভাসল বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরি-‘আইকন অব দ্য সিজ’। এ যেন আস্ত এক বর্ণিল নগরী-ভাসছে সাগরের অন্তহীন নীলে। খাবারের অর্ধশত দোকান, বার, ওয়াটার স্লাইড, সুইমিংপুল, হ্রদ, জলপ্রপাত, পার্ক-গাছপালা কী নেই এতে! সবমিলিয়ে বিনোদনের এক অনন্য জগৎ এটি। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামি বন্দর থেকে শনিবার প্রথমবারের মতো সমুদ্রে যাত্রা শুরু করে এ প্রমোদতরি। এর আগে ২৩ জানুয়ারি আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি এটির উদ্বোধন করেন।
টাইটানিকের চেয়েও ৫ গুণ বড় এই প্রমোদতরি। এর দৈর্ঘ্য ৩৬৫ মিটার (১ হাজার ১৯৭ ফুট), যা আইফেল টাওয়ারের চেয়েও লম্বা। ওজন ২ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টন। এই ক্রুজ জাহাজে ২০টি ডেক রয়েছে, রয়েছে ৭টি সুইমিংপুল ও ৬টি ওয়াটার স্লাইড। এর সবচেয়ে ওপরের ডেকে আছে ৪০টির বেশি বার, রেস্তোরাঁ, লাউঞ্জসহ নানা বিনোদনের জায়গা। বিশাল এই তরিতে থাকতে পারবেন ৭ হাজার ৬০০ জন যাত্রী। ২ হাজার ৩৫০ জন ক্রুর জন্য আলাদা থাকার বন্দোবস্ত আছে এতে। জাহাজে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে রিভার্স অসমোসিস ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
রয়্যাল ক্যারিবিয়ান গ্রুপের মালিকানাধীন এই প্রমোদতরির সামনের দিকে আছে ‘অ্যাকোয়াডোম’। সেখানে দেখা যাবে জলপ্রপাত। আরও আছে ৫ ডেক উঁচু ও খোলা সেন্ট্রাল পার্ক। তাতে আছে এক সাঁতারুর ভাস্কর্য এবং প্রচুর গাছপালা। থ্রিল আইল্যান্ড নামে বিশালাকার ওয়াটার পার্কও আছে এ প্রমোদতরিতে। ‘সার্ফসাইড’ নামে আছে একটি গ্রামীণ এলাকা। সরাসরি সমুদ্রের দৃশ্য দেখার জন্য আছে ‘রয়্যাল প্রমেনেড’।
এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের কয়েক ডজন কেবিন আছে আইকন অব দ্য সিজে। ৭০ শতাংশ কক্ষের সঙ্গেই আছে বারান্দা। যেখানে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের সীমাহীন নীল সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। যাত্রীদের বিনোদন দেওয়ার জন্য ৫০ জন সংগীতশিল্পী ও কমেডিয়ানও আছে এই তরিতে।
এতদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরি ছিল রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের ‘ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ।’ এটির দৈর্ঘ্য ছিল ১ হাজার ১৮৮ ফুট আর ওজন ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬০০ টন।
নির্মাণ ব্যয় : ২০২২ সালের এপ্রিলে ফিনল্যান্ডের মেয়ার তুর্কু শিপইয়ার্ডে এই প্রমোদতরি তৈরির কাজ শুরু হয়। সেখান থেকেই এর ট্রায়াল রান হয়েছে। সেই পরীক্ষায় কয়েকশ মাইল পথ ভ্রমণ করেছে আইকন অব দ্য সিজ। জাহাজটি বানাতে খরচ হয়েছে ২০০ কোটি ডলার। সময় লেগেছে ৯০০ দিন।
যে পথে চলবে : মায়ামি থেকে পশ্চিম ক্যারিবিয়ান পর্যন্ত চলবে এই প্রমোদতরি। ক্যারিবিয়ান সাগরের পূর্ব ও পশ্চিম পথ ধরে এক সপ্তাহের সফরে থাকবে এটি। এই সাত রাতের মধ্যে এক রাতে বাহামায় রয়্যাল ক্যারিবিয়ান সংস্থার একটি দ্বীপে অতিথিদের নিয়ে যাওয়া হবে। সাত রাতে ইস্টার্ন ক্যারিবিয়ানের এই সফরে বেশ কয়েকটি স্থানে ভ্রমণ করা যাবে।
খরচ কেমন হবে : রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালসের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, প্রমোদতরিটির প্রথম যাত্রায় জনপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ ডলার (প্রায় ২ লাখ টাকা) থেকে ২ হাজার ২০০ ডলার (প্রায় আড়াই লাখ টাকা)। পরবর্তী যাত্রায় এ খরচ কমবেশি করতে পারে কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের অক্টোবরে এর টিকিট বুকিং শুরু হয়েছিল। তখন মাথাপিছু টিকিটের দাম ছিল ১ হাজার ২৫৯ ডলার। পরে মূল্য বেড়ে হয় ১ হাজার ৮০০ ডলার।
এদিকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চালিত আইকন অব দ্য সিজ থেকে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকারক মিথেন গ্যাস অনেক বেশি নিঃসৃত হবে বলে উদ্বিগ্ন পরিবেশবাদীরা।