Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাক্ষী মেলে না, তদন্তে দুর্বলতা

মাদক মামলায় ৫২ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে যায়

বেরিয়ে এসে আবারও জড়াচ্ছে মাদক কারবারে * সাক্ষী করা হয় সোর্স, ভাড়াটিয়া বা পথচারীকে

Icon

ইকবাল হাসান ফরিদ

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মাদক মামলায় ৫২ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে যায়

সাক্ষীদের অনীহা, জব্দ তালিকা প্রস্তুতে গরমিল, এজাহার ও তদন্তে ত্রুটিসহ নানা কারণে অধিকাংশ মাদক মামলার আসামিরাই খালাস পেয়ে যাচ্ছে। তারা আইনি নানা ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে এসে আবারও জড়াচ্ছে মাদক কারবারে। যে কারণে দেশে দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে মাদক। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ সাল থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৩ বছরে দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৫৪ হাজার ৮৬১টি মামলা দায়ের করে। এতে আসামি করা হয় ৫৮ হাজার ৯৮১ জনকে। এর মধ্যে ২৬ হাজার ৮০২টি মামলায় সাজা হয়েছে ২৮ হাজার ২৪২ জনের। আর ২৮ হাজার ৫৯টি মামলায় খালাস পেয়েছে ৩০ হাজার ৭৩০ আসামি। ওই হিসাবে দেখা গেছে, প্রায় ৪৮ শতাংশ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে আর ৫২ শতাংশ আসামিই খালাস পেয়ে যাচ্ছে।

মাদক মামলার বিচারসংক্রান্ত অন্য সংস্থাগুলোর হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য সংস্থাগুলোর মামলার পরিণতি আরো নাজুক। প্রতি বছরই মাদক মামলায় খালাস পাওয়া আসামির সংখ্যা বাড়ছে। মাদক মামলার আসামিরা যাতে নানা ফাঁকফোকরে খালাস পেতে না পারে সেই লক্ষ্যে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি প্রত্যেক অপরাধ বিভাগের ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান শুক্রবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, মাদক মামলায় সাজা যাতে নিশ্চিত হয় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। কী কী কারণে আসামিরা খালাস পেয়ে যায়, সেসব কারণ আমরা চিহ্নিত করে পুলিশের এ ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছি। মাদক মামলা হওয়ার আগে ও মামলা হওয়ার পর তদন্তকারী কর্মকর্তাদের এসব মেনে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে মাদকের মামলায় আসামিদের সাজার হার বাড়বে আশা করি।

তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে। মাদকের গডফাদারদের ধরতেও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আসলে মাদক নিয়ন্ত্রণে একদিকে কারবারিদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে মাদক ব্যবহারকারীর হারও কমাতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মামলার এজাহার দায়েরে দুর্বলতা, তদন্তে দুর্বলতা, সাক্ষীদের অনুপস্থিতি এবং আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সাক্ষী দেওয়ায় মাদক মামলার আসামিরা অভিযুক্ত হচ্ছে না। সহজেই পেয়ে যাচ্ছে জামিন। তারা বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩ ধারা অনুযায়ী কোনো মাদকদ্রব্য বা অন্য কিছু জব্দ করতে হলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাক্ষী করা বাধ্যতামূলক। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাদকের চালান ধরা পড়লে সাক্ষী করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স কিংবা ভাড়াটিয়া অথবা পথচারীকে। পরে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজনে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকে আদালত থেকে সমন যাওয়ার আগেই বাসা বদলে ফেলেন।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল বলেন, মাদক মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষী অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষীদের আদালতে হাজিরা দিতে অনীহা, আবার মামলায় তাদের সঠিক নাম ঠিকানা না থাকায় অনেক সময় আদালতে সাক্ষী হাজির করা যায় না। আবার সাক্ষীদের কোনো ধরনের যাতায়াত খরচ দেওয়ার বিধান নেই। এ কারণে কেউ সাক্ষী হলেও আদালতে সাক্ষী দিতে যেতে চান না। আবার যারা যান, তাদের কেউ কেউ আসামিপক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে আসামির পক্ষে কথা বলেন। এসব কারণে মূলত মামলা থেকে আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। তিনি বলেন, তবে আগের চেয়ে মামলায় সাজার হার কিছুটা বেড়েছে। আগে আরও নাজুক অবস্থা ছিল।

সূত্র জানিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তার দক্ষতার অভাবে মাদক মামলার আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সতর্ক থাকা হচ্ছে যাতে কোনো ধরনের ত্রুটিপূর্ণ মামলা না হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অন্যান্য সংস্থার তুলনায় ডিএনসির মামলার নিষ্পত্তির হার বেশি। আসামিদের শাস্তির হারও বেশি। এই সংস্থার হিসাবে দেখা গেছে, তাদের মামলায় ৫২ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে গেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম