মানিকগঞ্জে গ্যাস-সংকটে ধুঁকছে শিল্পকারখানা
বন্ধের উপক্রম সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো : দিনে ১৫ পিএসআই গ্যাস প্রয়োজন, মিলছে ১ পিএসআইয়েরও কম
মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অব্যাহত গ্যাস-সংকটের কারণে ঢাকার আশুলিয়া থেকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা পর্যন্ত ৭১টি শিল্পকারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে অনেক প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি অর্থ ব্যয়ে বিদ্যুৎ ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে শিল্প মালিকদের। এছাড়া জেলার সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোও বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এসব ফিলিং স্টেশনে প্রতিদিন ১৫ পিএসআই গ্যাস প্রয়োজন, এর বিপরীতে ১ পিএসআইয়েরও কম গ্যাস মিলছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আতিকুল হক সিদ্দিকী জানান, ট্রান্সমিশন কোম্পানি প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় গ্যাস-সংকট চলছে।
জেলার তিতাস গ্যাস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ধামরাই উপজেলার ইসলামপুর থেকে আরিচা পর্যন্ত মানিকগঞ্জের তিতাস গ্যাসের আওতাভুক্ত। এ অঞ্চলে মিটারযুক্ত ৪৬টি আবাসিক, ৩৩টি বাণিজ্যিক, ৭১টি শিল্পকারখানা এবং ১৮টি সিএনজি স্টেশনে এবং মিটারবিহীন ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস-সংযোগ রয়েছে।
মানিকগঞ্জের নয়াডিঙ্গী এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত রাইজিং স্পিনিং কারখানাটিতে সুতা ও কাপড় তৈরি করা হয়। কারখানাটির উৎপাদন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এতে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে প্রতি মাসে ২৩ লাখ ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে মিলছে যৎসামান্য। ফলে উৎপাদনে ধস নেমেছে। উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে বাড়তি অর্থ ব্যয়ে বিদ্যুৎ ও এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশল বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, গ্যাসের চরম সংকটের কারণে উৎপাদন সচল রাখতে প্রতি মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে এবং প্রায় ৯ লাখ টাকার এলপিজি গ্যাস কিনতে হচ্ছে। এছাড়া তিতাস গ্যাস না পেলেও ন্যূনতম বিল ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। গ্যাস-সংকটের কারণে বাড়তি অর্থ ব্যয়ের কারণে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সচল রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
একই অবস্থা গোলড়া এলাকায় স্থাপিত আকিজ ট্রেক্সটাইল মিলেও। প্রতিমাসে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে অতিরিক্ত আড়াই কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে। আগে গ্যাসে লাগতো আড়াই কোটি এখন বিকল্প পদ্ধতিতে ফ্যাক্টরি চালাতে ৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। নয়াডিঙ্গি এলাকায় তারাসিমা গার্মেন্টে গ্যাস না থাকায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। গ্যাস না থাকায় গিলন্ড এলাকায় মুন্নু ফেব্রিকস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জেলার একাধিক শিল্পকারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানিকগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাসের সংকট চলছে। দুই মাস ধরে এ সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। দিনে গ্যাসের চাপ একেবারেই থাকে না। রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত মাত্র ৫ ঘণ্টা সীমিত গ্যাসের চাপ থাকে। জেলা বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, বিসিকে ১৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম চালু হয়েছে। অধিকাংশ কারখানায় গ্যাসের প্রয়োজন। তবে প্রয়োজনীয় গ্যাস মিলছে না। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বাড়াতে ন্যূনতম গ্যাস সরবরাহ জরুরি।
জেলায় সিএনজি স্টেশনগুলোতেও গ্যাসের চরম সংকট চলছে। দিনের অধিকাংশ সময় এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্যাস থাকে না। এতে আর্থিক লোকসানে পড়েছেন সিএনজি স্টেশনগুলোর মালিকরা।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে মানিকগঞ্জের রহমান সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের মালিক আবদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন ১৫ পিএসআই গ্যাস প্রয়োজন, এর বিপরীতে ১ পিএসআইয়েরও কম গ্যাস মিলছে। গ্যাসের এ সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আতিকুল হক সিদ্দিকী যুগান্তরকে বলেন, সঞ্চালন পাইপের মাধ্যমে তিতাস গ্যাস সরবরাহ ও বিতরণ করা হয়ে থাকে। তবে ট্রান্সমিশন কোম্পানি প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় মানিকগঞ্জে গ্যাস-সংকট রয়েছে। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে মানিকগঞ্জে বিকল্প একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে মানিকগঞ্জে গ্যাসের সংকট থাকবে না বলে আশা করা যায়।