রাতভর শীতে কাঁপলেও ঘরে ঠাঁই মেলেনি
সকালে মিলল বৃদ্ধের লাশ

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

হাঁড় কাঁপানো শীতে একটু আশ্রয়ের আশায় সন্ধ্যায় ভাতিজার বাড়িতে এসেছিলেন নিঃসন্তান বৃদ্ধ। কিন্তু ভাতিজারা কেউ বাড়িতে আশ্রয় দেননি। সারা রাত বাড়ির আঙিনায় শীতে কাঁপলেও দয়া হয়নি কারও। সকালে বাড়িসংলগ্ন বড়াল নদীতে মিলেছে ওই বৃদ্ধের লাশ।
নাটোরের বড়াইগ্রামের পারবাগডোব গ্রামে শনিবার এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহত বৃদ্ধ মগরব আলী (৮০) ওই গ্রামের মৃত আইজুদ্দিন মোল্লার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে প্রতিবেশীরা নদীতে তার লাশ দেখে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ সময় তার পরনে শুধু লুঙ্গি ছিল। তবে তিনি কীভাবে নদীতে গেলেন, সে রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি।
বড়াইগ্রাম ইউপি সদস্য ওয়ারছেল আলী জানান, একসময় জায়গা-জমি থাকলেও পরে সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়েন নিঃসন্তান মগরব আলী। উপজেলার পারকোলে তিনি ঘরজামাই থাকতেন। প্রায় ১৫ বছর আগে স্ত্রী মারা গেলে তার আশ্রয় মেলে বৃদ্ধাশ্রমে।
কয়েকদিন আগে বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ তাকে আবার শ্বশুরবাড়িতে রেখে যান। কিন্তু তারাও তাকে নিতে রাজি হননি। গত সপ্তাহে ওই এলাকার ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন লোক মগরব আলীকে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভাতিজা গুলজার হোসেনকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা রাতে থাকতে দিলেও সকালে আবার বের করে দেন।
এ সময় মনের কষ্টে তিনি রাস্তায় গাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পুনরায় শ্বশুরবাড়িতে রেখে আসেন। শুক্রবার বিকালে আবারও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে ভাতিজা গুলজারের বাড়ির গেটের সামনে রেখে চলে যায়।
কিন্তু ভাতিজাসহ তার সন্তানরা কেউই তাকে ঘরে তুলে নেয়নি। রাতে প্রচণ্ড শীতে বৃদ্ধ কাতরালেও ফিরেও চায়নি কেউ। বাধ্য হয়ে বাড়ির গেটের সামনেই বসে ছিলেন তিনি। পরে সকালে বাড়ির সামনের নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলজার হোসেন বলেন, ‘যখন তাকে বাড়ির সামনে রেখে যাওয়া হয়, তখন আমরা অন্যত্র একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলাম। রাতে আমি বাড়িতে এসে তাকে দেখেছিলাম। তবে হাসপাতালে আমার পুত্রবধূর সন্তান হওয়ায় সেখানে চলে যেতে হয়েছে।’
প্রচণ্ড শীতে একজন বৃদ্ধকে বাড়ির বাইরে ফেলে কীভাবে চলে গেলেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান বলেন, বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আপাতত একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।