মঞ্জুর ৩৮ বছরের সাম্রাজ্যে মহারাজের জয়

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পিরোজপুর-২ আসনে (ভান্ডারিয়া-কাউখালি-নেছারাবাদ) ৩৮ বছরের সাম্রাজ্যের ইতি ঘটল বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর। এই আসনে এবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট পেয়েছেন ৯৯ হাজার ২৬৮ ভোট। আর নৌকা নিয়ে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন ৭০ হাজার ৬৮১ ভোট।
এই আসনে ৬ বারের সংসদ-সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। টানা ১৪ বছর মন্ত্রী ছিলেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ। তার সময়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় প্রায় চার দশক ধরে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। একসময় তার পিএস ছিলেন মহিউদ্দিন মহারাজ। তবে এবারের নির্বাচনে সেই শিষ্যের কাছেই হারতে হয়েছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। নির্বাচনের আগ থেকেই হারের শঙ্কায় ছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এ কারণে নিজের প্রতীক বাইসাইকেল বিসর্জন দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। কিন্তু ভান্ডারিয়া, কাউখালি এবং নেছারাবাদ এই তিন উপজেলার আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসহযোগী সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী নৌকার পক্ষে না গিয়ে মহারাজকে জেতাতে মাঠ চষে বেড়ান। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস নিজ জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজকে হারাতে মঞ্জুর পক্ষে অবস্থান নেন। আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধি নৌকার বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারের হুমকিও দেন কানাই লাল বিশ্বাস। অবশ্য তাতেও ভোটের মাঠে শেষ রক্ষা হয়নি মঞ্জুর। উলটো মঞ্জুর দলের অনেক নেতাকর্মী মহারাজকে জেতাতে কাজ করেন।
জানা যায়, নির্বাচনের আগ থেকেই সংসদীয় আসনের প্রায় শতভাগ জনপ্রতিনিধি স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন। জেলার তিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুই পৌরসভার মেয়র মহারাজের পক্ষে দিনরাত কাজ করেন। এছাড়া তিন উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে ২০ জনই ঈগলের পক্ষে কাজ করেন। তিন উপজেলা পরিষদের সাধারণ ও সংরক্ষিত ছয় ভাইস চেয়ারম্যানের চারজন ঈগলের পক্ষে অবস্থান নেন। এছাড়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপির নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ মহিউদ্দিনকে সমর্থন দিয়ে মাঠে ঘাটে সরব ভূমিকা পালন করেন।
তিন উপজেলার মধ্যে ভান্ডারিয়াতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (নৌকা) পেয়েছেন ২৬০৬১ ভোট। আর মহিউদ্দিন মহারাজ পেয়েছেন ৪০৬০৭ ভোট। এই উপজেলায় ১৪ হাজার ৫৬৪ ভোট বেশি পান মহারাজ। সবচেয়ে চমক ছিল এই উপজেলার ৩নং তেলিখালী ইউনিয়নে। এখানকার ভোটাররা একজোট হয়ে নৌকার বিপক্ষে ভোট দেন। তেলিখালি ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, ঈগল প্রতীকে মহিউদ্দিন মহারাজ পেয়েছেন ১৫০০৪ ভোট। অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন মাত্র ৪৯ ভোট।
কাউখালী উপজেলায়ও মঞ্জুর চেয়ে মহারাজ প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। প্রাপ্ত ফলে দেখা যায়, ঈগল পেয়েছে ১৩ হাজার ২৭০ ভোট। আর নৌকা পেয়েছে ৯ হাজার ৮৭৪ ভোট।
নেছারাবাদ উপজেলায় মহিউদ্দিন মহারাজ পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৮৪৭ ভোট। আর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৯৮ ভোট। এখানে নৌকার থেকে ঈগল বেশি পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৪৯ ভোট।
২০১৬ সালের জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে মহিউদ্দিন মহারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। ওই সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম।
মহিউদ্দিন মহারাজের বাবা প্রয়াত শাহাদাৎ হোসেন ছিলেন তেলীখালী ইউনিয়নের একাধিকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তার মেজো ভাই মিরাজুল ইসলাম ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান। আরেক ভাই শামছুদ্দীন তেলীখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আরেক ভাই সালাউদ্দিন ব্যবসায়ী।