রাজশাহীর ৬টি আসন
নৌকার প্রার্থীদের জন্য এবার অগ্নিপরীক্ষা
উৎসবমুখর ভোটে সহিংসতার শঙ্কা * ভোটারদের বাধাদান বরদাশত করব না -আরএমপি কমিশনার
আনু মোস্তফা, রাজশাহী
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহীর ৬টি আসনেই আজকের ভোট নিয়ে বিরাজ করছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। ৬টির মধ্যে পাঁচটি আসনে ভোটের লড়াই হচ্ছে স্বতন্ত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের।
একটি আসন ছাড়া বাকি ৫টিতেই স্বতন্ত্রদের চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থীরা। ফলে নিজ দলের স্বতন্ত্রদের মোকাবিলায় নৌকার প্রার্থীদের আজ যেন অগ্নিপরীক্ষা। ভোটকে কেন্দ্র করে শহর ছাড়িয়ে গ্রামগঞ্জেও উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও প্রার্থীদের রেষারেষিতে উৎসবের এই ভোটে কয়েকটি আসনে সহিংসতারও আশঙ্কা আছে। যদিও সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।
সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে আসনে-আসনে গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন আরএমপি কমিশনার।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে তিনবারের সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী দীর্ঘ ১৫ বছর বিভিন্ন বিতর্কিত কাজ করে সমালোচিত হয়েছেন বারবার। এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীরাও ফারুকের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদেরই একজন গোলাম রাব্বানী।
রাব্বানীর বাইরে এ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়ছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া। এই তিন প্রার্থীই প্রচারকালে ফারুকের বিরুদ্ধে মাঠে সরব থেকেছেন।
যে কারণে নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীকে এবার বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। তবে এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ফারুকের নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র গোলাম রাব্বানীর কাঁচি প্রতীকের।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে গত তিনবার নৌকা নিয়ে সংসদ-সদস্য হয়েছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এবারও তিনি নৌকা নিয়েই নির্বাচন করছেন। বাদশার কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী কামালকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
আসনটি জোটের প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়ার পরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা নির্বাচন করছেন। মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ বাদশার পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে আছেন। ফলে ফজলে হোসেন বাদশার জন্য এবারের নির্বাচন ‘অগ্নিপরীক্ষা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদের বিপরীতে দলের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। অন্য দলের যারা নির্বাচনে আছেন তাদের তেমন পরিচিতি নেই। তবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র না থাকলেও এখানে বিএনএমের প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা মতিউর রহমান মন্টু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে ভোটের প্রশ্নে জটিল সমীকরণের কিছুটা ইঙ্গিত আছে।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনটি জেলার সবচেয়ে আলোচিত আসন। এ আসনে তিনবারের এমপি এনামুল হক এবার দলীয় মনোনয়ন হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে সমানে-সমান টেক্কা দিয়েছেন প্রচারণার সময়। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হামলা, মামলা, অগ্নিসংযোগ ছিল আসনটির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
এ আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে ইতোমধ্যে নৌকার প্রার্থী আজাদের বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। শনিবার বাগমারা থানায় বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মজিদ।
নৌকার প্রার্থী আজাদ বাগমারার তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ আসনে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক ২০০৮ সাল থেকেই এলাকার সংসদ সদস্য। সারা দেশে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ আসনের তালিকায় রাজশাহী-৪ আসনটি অন্যতম।
রাজশাহী-৫ (দুর্গাপুর-পুঠিয়া) আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর তুলনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে নৌকা। একদফা বিরতির পর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি ও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। শুরু থেকে নির্বাচনি মাঠে সরব আছেন দারা।
তবে এ আসনের দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের বড় অংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগ নেতা ওবায়দুর রহমানকে ঈগল প্রতীকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে এখানেও নৌকার সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনটির হেভিওয়েট প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন। এলাকাবাসীর মতে, আগে তিনবার সংসদ-সদস্য হয়েছেন শাহরিয়ার। তবে এতটা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়নি। এবার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ-সদস্য রাহেনুল হক রায়হানকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাকে।
এলাকার মানুষ আরও জানিয়েছেন, শাহরিয়ারের জন্য এবার অগ্নিপরীক্ষা কারণ দলের নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশই তার বিরুদ্ধে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীকের পক্ষে। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, যদি ভোটাররা ভেদাভেদ ভুলে নৌকায় ভোট দেন তবে ফলাফল শাহরিয়ারের অনুকূলে যেতে পারে।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, সবার সমন্বয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় রয়েছে।
রাজশাহী জেলার ছয়টি আসনে এবার ভোটার ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬১ জন। আর ৭৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩১০টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে। ৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪২ প্রার্থী।