পুলিশের ওসির ব্ল্যাকমেইলে গৃহবধূর সর্বনাশ
নেসারুল হক খোকন
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পুলিশের একজন অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে একজন গৃহবধূকে দিনের পর দিন অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করেছেন। শারীরিক সম্পর্কের সময় তিনি আপত্তিকর দৃশ্য গোপনে মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখতেন। পরে এসব দেখিয়ে পুনরায় অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার পাশে টঙ্গী এলাকার একটি বাসায়। ওই ইনস্পেকটরের নাম শীতল পাল। তিনি ওসি (তদন্ত) হিসাবে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় কর্মরত। তার বাড়ি বাগেরহাট জেলায়।
এদিকে ঘটনার একপর্যায়ে নির্যাতিত গৃহবধূর স্বামী বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর তিনি প্রতিকার চেয়ে পুলিশের আইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘ব্যক্তির অপরাধের দায় প্রতিষ্ঠান কোনোক্রমেই নেবে না। এ বিষয়ে আইজি স্যারের কমপ্লেইন সেলে অভিযোগ হয়ে থাকলে যথাযথভাবেই তদন্ত হবে। এরপর যে নির্দেশনা দেবেন, তা-ই বাস্তবায়ন হবে।’
এমন সম্পর্কে রাজি না হলে ‘ঘটনার জন্য তুমি দায়ী থাকবে’ চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করার কথা বলতেন ইনস্পেকটর শীতল পাল। এমনকি অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবিও নিজের মোবাইল ফোনে রেখেছেন। যখন প্রয়োজন, তখন গৃহবধূর মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেন ওই ইনস্পেকটর। এমনকি মোবাইল হ্যাকড করে আবার সেই ছবি মুছেও ফেলেন। যাতে তার বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না যায়। মোবাইল ফোন হ্যাকড হওয়ার বিষয়ে ৪ ডিসেম্বর টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন নির্যাতিত গৃহবধূর স্বামী।
আইজিপির কমপ্লেইন সেলে দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, নির্যাতিত গৃহবধূর স্বামীর সঙ্গে ইনস্পেকটর শীতল পালের বন্ধুত্ব ছিল। তাদের গ্রামের বাড়িও একই স্থানে। সে সুবাদে শীতল পাল ঢাকায় এলে গৃহবধূর স্বামীর অবর্তমানে তার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। মোবাইল ফোনে তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দেখতেন কখন তার স্বামী বাসা থেকে বের হয়ে যান। গৃহবধূর স্বামী যখন অফিসে, ঠিক তখনই তার বাসায় চলে যেতেন ইনস্পেকটর শীতল পাল। নির্যাতিতার স্বামী যুগান্তরকে বলেন, “প্রথমবার একা বাসায় তাকে কুপ্রস্তাব দেন শীতল পাল। এতে রাজি না হওয়ায় তিনি (শীতল পাল) বলেন, আমি ট্রাকের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করব। চিরকুট লিখে যাব এর জন্য দায়ী তুমি।’ এভাবে তাকে ভয় দেখিয়ে দুর্বল করেছেন শীতল পাল। এ সময় কিছু ছবিও তুলে রেখেছেন। স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে বারবার তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন তিনি।”
গত ৭ ডিসেম্বর বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয় পুলিশের মহাপরিদর্শকের কমপ্লেইন সেলে। এতে বলা হয়, একজন স্বামী হিসাবে শীতল পালের এমন অনৈতিক কার্যকলাপ মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ২৬ নভেম্বর অফিসে যাওয়ার পর তিনি দেখতে পান কে বা কারা তার মোবাইল ফোন থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলেছে। তিনি ধারণা করছেন, শীতল পালের সঙ্গে স্ত্রীর অনৈতিক ছবি মুছতে গিয়ে সবই মুছে ফেলা হয়েছে। এরপর তথ্য প্রযুক্তিবিদের সহযোগিতায় জানতে পারি মোবাইল হ্যাকড করে সব মুছে ফেলা হয়েছে। যাতে ইনস্পেকটর শীতল পালের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না যায়। তবে তথ্য মুছে ফেলার আগেই অনৈতিকতার সব চিত্র তিনি পেনড্রাইভে রেখেছিলেন, যা এখন পুলিশ সদর দপ্তরে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দেবেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইনস্পেকটর শীতল পাল বলেন, ‘এটা আসলে ভুল বোঝাবুঝি। আমাদের বাড়ি একই জায়গায়। আর পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো অভিযোগ সম্পর্কে এখনো তদন্ত শুরু হয়নি। হয়ে থাকলে আমি জানতাম।’