Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আরসার লজিস্টিক শাখার প্রধানসহ ৩ জন গ্রেফতার

ককটেল, বিস্ফোরক, সামরিক পোশাক, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

Icon

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আরসার লজিস্টিক শাখার প্রধানসহ ৩ জন গ্রেফতার

মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার লজিস্টিক শাখার প্রধান হাফেজ রহমত উল্লাহসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছেন র‌্যাব-১৫ এর সদস্যরা। রোববার ভোরে কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলীর ডিসি পাহাড়সংলগ্ন আদর্শগ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় বিপুলসংখ্যক ককটেল, বিস্ফোরক সদৃশ বস্তু, সামরিক বাহিনীর ন্যায় পোশাক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। গ্রেফতাররা হলেন-উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৩, ব্লক-এ/২ এর বাসিন্দা হাফেজ রহমত উল্লাহ (৩৫), কুতুপালং ক্যাম্প-৫, ব্লক-ই/৬ এর বাসিন্দা মঞ্জুর আলম (২৩) ও একই ক্যাম্পের নুরুল ইসলাম।

র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আরসার লজিস্টিক কমান্ডার ও তার কয়েকজন সঙ্গী কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার ডিসি পাহাড়সংলগ্ন আদর্শগ্রামে অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের আভিযানিক দল ওই এলাকায় গিয়ে একটি বাড়ি ঘেরাও করে। পরে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে হাফেজ রহমত উল্লাহসহ আরসার তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে। এ সময় সেখান থেকে ৪ কেজি ৯ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য, ১৫ পিস ককটেল, আইডি তৈরির সরঞ্জাম, দেড় কেজি মার্কারি, একটি ওয়াকিটকি, ৫৩টি সার্কিট, ৯ বান্ডিল সামরিক বাহিনীর ন্যায় পোশাক তৈরির কাপড়, ৭০টি গেঞ্জি, ১২টি টুপি, ১৩০টি হ্যান্ড গ্লাভস, নগদ আড়াই হাজার টাকা, ২টি মোবাইল এবং একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, হাফেজ রহমত উল্লাহ ২০০০ সালে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপে বসবাস এবং সেখানে থাকাকালে হেফজ শেষ করে। এরপর নানা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেয়াদে হাফেজ, দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত পড়াশোনা করে এবং বার্মিজ, রোহিঙ্গা, বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, আরবি ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। পড়াশোনা শেষে সে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার গিয়ে নিজ জমি-জমা বিক্রি করে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া যায়। ২০১৮ সালে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস শুরু করে। ২০১৯ সালে আরসার গান গ্রুপ কমান্ডার মাস্টার ইউনুছের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মৌলভী রফিকের মাধ্যমে হাফেজ রহমত উল্লাহ আরসায় যোগ দেয়। এরপর তাকে মিয়ানমারে তসকিলে (ট্রেনিং) পাঠানো হয় এবং সেখানে ৪ মাস ট্রেনিং নেয়। এরপর সে আরসার ওলামা বডির সদস্য হয় এবং বিভিন্ন মসজিদে সাধারণ রোহিঙ্গাদের আরসায় যোগদানের দাওয়াত দেওয়া শুরু করে। এরই একপর্যায় আরসা প্রধান আতাউল্লাহ এবং সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ওস্তাদ খালেদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। সিগন্যাল অ্যাপসের মাধ্যমে হাফেজ রহমত উল্লাহ তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। আরসার জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট, বোমা ও মাইন বানানোর জন্য বিভিন্ন মালামাল সংগ্রহ এবং সরবরাহ করার সুবিধার্থে ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে কক্সবাজার শহরে ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করছিল।

র‌্যাব আরও জানায়, আরসা এবং সামরিক শাখার প্রধানের ডিমান্ড অনুযায়ী হাফেজ রহমত উল্লাহ বিভিন্ন উৎস হতে আরসা সদস্যদের জন্য ইউনিফরমের কাপড়, শীত বস্ত্র, রেইন কোট, বুট জুতা, মোজা, বেল্ট, ক্যাপ, ব্যাগ এবং বোমা ও মাইন বানানোর জন্য হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, মার্কারি (পারদ), ফোম, টর্চ লাইট, ব্যাটারি, ব্যাটারির ক্যাপ, ইলেকট্রিক তার, ইলেকট্রিক ক্লিপ, ছোট টেবিল ঘড়ি, ছোট লাইট, লোহার রড, সিমেন্ট, ছোট লোহা, পাইপ, কাচ সহকারে নানান ধরনের বোমা ও মাইন তৈরির সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে তা জমা রাখত। পরে আরসার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড খালেদের নির্দেশনায় সরঞ্জামাদি উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সদস্যদের কাছে পাঠাত।

আর গ্রেফতার হওয়া মঞ্জুর আলম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে সপরিবারে ক্যাম্পে বাস শুরু করে। ২০১৯ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পের নাইটগার্ড হিসাবে কাজ করত। ২০২১ সালের শেষের দিকে আরসা নেতা ইমাম হোসেনের মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে।

নুরুল ইসলামও ২০১৭ সালে টেকনাফের শামলাপুর হয়ে সপরিবারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে ৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-বি/৪ এর আরসার ব্লক জিম্মাদার জলিলের মাধ্যমে আরসায় যোগ দেয় এবং ক্যাম্প-৫ এর বি ব্লকের আরসার ব্লক পাহারাদার হিসাবে কাজ করত। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্ক হলো আরসার সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদকসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এই গোষ্ঠীটি জড়িত। গত এক বছরে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরসার বিভিন্ন পর্যায়ের ৮৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম