শেয়ারবাজারে ক্যাটাগরি পরিবর্তনে বিলম্ব
দুর্বল কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা
পুরোনো বিধিমালায় ফিরে যাবে ২৮ ফেব্রুয়ারি
মনির হোসেন
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শেয়ারবাজারে কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তনসংক্রান্ত বিধিমালায় ফিরে যেতে বিলম্ব করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এতে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিগুলোকে দুর্বল ক্যাটাগরিতে (জেড) নিতে আরও সময় লাগবে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। এর মানে হলো, দুর্বল কোম্পানিগুলো ওই সময় পর্যন্ত শেয়ারবাজারে কারসাজি করতে পারবে। এদিকে বিলম্বে বাস্তবায়নের কারণ নিয়ে বাজারে ব্যাপক কানাঘুষা চলছে। তবে সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে মালিকানা পরিবর্তন হওয়া কিছু দুর্বল কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দিতে এই আয়োজন করা হয়েছে। এর সঙ্গে বড় একটি চক্র জড়িত। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বলছে, বাজারের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, কোনো কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করলে তা বার্ষিক সাধারণ সভায় পাশ করা এবং বণ্টনের বিষয় রয়েছে। সে কারণে একটু সময় নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সময় নেওয়ার ফলে কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক এবং বিনিয়োগকারীরা চিন্তা করার সময় পাবে। উদ্যোক্তারা চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও বুঝতে পারবেন কোন কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তন হতে পারে। এসব কিছু বিবেচনায় বাজারের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্টক এক্সচেঞ্জের সেটেলমেন্ট রেগুলেশন আইন ২০১৩ অনুসারে শেয়ারবাজারে তিন ধরনের কোম্পানি রয়েছে-এ, বি এবং জেড। কোনো কোম্পানি যদি নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা করে এবং বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম ১০ শতাংশ লভাংশ দেয়, সেটি ‘এ’ ক্যাটাগরি। ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিলে ‘বি’ এবং এজিএম না করা ও লভ্যাংশ দিতে না পারলে সেটি ‘জেড’ ক্যাটাগরি। বিদ্যমান আইনে কোম্পানি, বিনিয়োগ লভ্যাংশ ঘোষণার পরই এটি কার্যকর হবে। তবে করোনার সময় দুই বছরের জন্য আইনে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে দুই বছর পার হলেও মূল আইনে ফিরে যেতে গড়িমসি করছে কমিশন। সাম্প্রতিক সময়ে যুগান্তরসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে সংবাদ ছাপা হলে আইনে ফিরে যাওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন করা হবে ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি।
এদিকে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারে কিছু অসুবিধা রয়েছে। এসব কোম্পানির লেনদেন নিষ্পত্তি হতে ৩ কার্যদিবস লাগে। কোম্পানির শেয়ারে কেনা ঋণ পাওয়া যায় না। এছাড়াও এসব কোম্পানি দুর্বল হিসাবে চিহ্নিত বলে এগুলোর শেয়ার বিনিয়োগকারীরা কিনতে চান না। তবে ক্যাটাগরি ‘এ’ অথবা ‘বি’তে থাকলে এ সমস্যা নেই। সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু দুর্বল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নিজস্ব লোকজন বসানো হয়েছে। মালিকানা পরিবর্তনের আগের এসব কোম্পানিতে পছন্দের লোকজনকে দিয়ে শেয়ার কেনানো হয়। এসব কোম্পানির মধ্যে অন্যতম হলো আল আমিন কেমিক্যাল, রাঙ্গামাটি ফুড, ইমাম বাটন, পারফিউম কেমিক্যাল, রহিমা ফুড, এমারেল্ড অয়েল, ফুওয়াং ফুড, ওয়াই ম্যাক্স ইলেক্ট্রোটেড, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, হাক্কানি পাল্প, ইয়াকিন পলিমার এবং রিংশাইন টেক্সটাইল। এসব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং পরিকল্পিত বিনিয়োগকারীরা যাতে নির্ধারিত সময়ে নিরাপদে বাজার থেকে বের হয়ে যেতে পারেন, সেজন্যই এ আয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে সি অ্যান্ড টেক্সটাইল এই সুবিধা নিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যুগান্তরকে বলেন, তাদের কোম্পানিগুলোতে আগে কিছু অনিয়ম হয়েছে। আর এসব কারণেই আগের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তারা কোনোভাবেই অনিয়ম বা বিনিয়োগকারীদের ঠকানোর সঙ্গে জড়িত নন। তাদের মতে, ক্যাটাগরি পরিবর্তনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া বিএসইসির কাজ। এ ব্যাপারে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো আবেদন বা সুযোগ চাওয়া হয়নি। এছাড়া আরও বেশকিছু কোম্পানি রয়েছে, তারা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারেনি। কিন্তু ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা আদেশের স্টক এক্সচেঞ্জ ওইসব কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারেনি। বর্তমানে এসব কোম্পানির লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা ধারাবাহিকভাবে কারসাজি করার সুযোগ পাবে।