মার্কিন শ্রমিক অধিকার স্মারক প্রসঙ্গে দূতাবাস
লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বাংলাদেশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি যে স্মারকটি ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশ তার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। আর শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে এ নীতিটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের ওপর আরোপের সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাস এমন সতর্কবার্তা দিয়ে ঢাকায় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (বাণিজ্য) মো. সেলিম রেজার লেখা চিঠিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে ২০ নভেম্বর। ওই চিঠির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ক্ষমতায়ন, অধিকার ও উচ্চ শ্রমমান এগিয়ে নিতে স্মারক’ সংক্রান্ত একটি সংকলিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
এদিকে বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, রাজনীতি ও ব্যবসা আলাদা বিষয়। আমেরিকা-ইউরোপ মিলে পোশাক রপ্তানি বন্ধে যে পাঁয়তারা করছে, তা বাস্তবায়ন হবে না। এই দুটি দেশ এমন কিছু করবে না, যার প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পড়বে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসের লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, যদিও স্মারকটি একটি বৈশ্বিক নীতি, যা সব দেশের ওপর আরোপিত হতে পারে; তারপরও এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে বাংলাদেশ এই নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। স্মারকটির প্রকাশ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশের শ্রমসংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশের দূতাবাসের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, স্মারক অনুসারে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো শ্রমসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে সরাসরি কাজ করতে পারবে। তাই এই নীতি আগ্রহী মার্কিন দূত বা মিশনগুলোকে দেশি বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহিত করতে পারে। এটা মনে হচ্ছে, শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে-এমনটি তারা মনে করলে বা বিশ্বাস করলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরোপ করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘স্মারকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় শঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এ স্মারকে শ্রম অধিকারের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তার পেছনে রাজনীতি রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে এ রাজনৈতিক অভিপ্রায়কে ব্যবহার করতে পারে। সে কারণে এ স্মারক বাংলাদেশের জন্য একটি বার্তা। কারণ, শ্রম অধিকারের অজুহাতে স্মারকে উল্লেখ করা যে কোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে। এ স্মারকের প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতের ওপর পড়তে পারে, এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওই প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম সই করার পর ১৬ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে বলেন, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন কিংবা ভয় দেখাবেন, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
এর আগে মে-তে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি ভিসানীতি ঘোষণা করে। ওই নীতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বলে জানানো হয়।
শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ নীতির বিষয়ে জানাতে গিয়ে অ্যান্টনি ব্লিংকেন বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমিক আন্দোলনের নেতা কল্পনা আক্তারের নামটিও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, কল্পনা জানিয়েছেন, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে এবং এজন্য তিনি (কল্পনা) এখনো বেঁচে আছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার, গত অর্থবছরে মোট রপ্তানি প্রায় ৯.৭৫ বিলিয়ন ডলার। এ বছরে ২৩ শতাংশেরও বেশি পতন সত্ত্বেও, বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশটি ৫.৭৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার ক্ষুণ্ন করার কোনো কারণ নেই। এ বিষয়ে সরকার শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের শ্রম-অধিকার ইস্যুগুলো কেন বারবার উত্থাপিত হচ্ছে?