Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ক্রেতা না থাকায় কারসাজি বন্ধ

খুচরায় ৬০০ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস

বস্তাপ্রতি চালের দাম ৩০০ টাকা ও আটা-ময়দায় কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা * বাজার অস্থির করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না-খাদ্যমন্ত্রী

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খুচরায় ৬০০ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস

রমজান মাস ও ঈদ ঘিরে পাঁচ বছর ধরে ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে গরুর মাংসের দাম। এক কেজি গরুর মাংস কিনতে ক্রেতাকে ৮০০ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।

তবে দুই থেকে তিন দিন ধরে রাজধানীর খুচরা বাজারে মাইকিং করে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকার কমে বিক্রি করা হচ্ছে গরুর মাংস। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকায় একটি শক্তিশালী চক্র অতিমুনাফা করতে মাংসের দাম বাড়িয়েছিল। এখন বিক্রি কমায় নিজেরাই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ফলে দাম কমিয়ে বিক্রি করছে। যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতেও তারা বাড়তি মুনাফা করছে।

এদিকে সরকারি গুদামে চালের মজুত পর্যাপ্ত। পাশাপাশি মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কোনো সংকট নেই। এরপরও বাজারে হু-হু করে বাড়ছে দাম। মিলারদের কারসাজিতে এক মাসের ব্যবধানে মিল পর্যায়ে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে রাজধানীর পাইকারি বাজারে বেড়েছে দাম। আর খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়ায় ক্রেতার পকেট কাটা যাচ্ছে। পাশাপাশি কেজিপ্রতি আটা ও ময়দা ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে খুচরা বাজারে আলুর কেজি এখনো ৫০ টাকা। আর চিনি কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর রামপুরা বাজারে মাইকিং করে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। একই চিত্র নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজারসহ একাধিক খুচরা বাজারে। তবে রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রতিকেজি ৬৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা দুই দিন আগেও ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রতিবছর রোজা ও ঈদ ঘিরে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফা করতে গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছে। যা আর কমানো হয়নি। কিন্তু এখন মানুষের আয় নেই। বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এমন পরিস্থিতি হয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারও প্রতিকেজি ৮০০ টাকায় গরুর মাংস কিনতে পারছে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের মাংস বিক্রি কমেছে। ফলে তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় মূল্য কমিয়ে বিক্রি করছে।

মালিবাগের খোরশেদ গোস্ত দোকানের মালিক খোরশেদ আলম বলেন, গ্রামে গরুর দাম কমেছে। তাই দাম কমিয়ে মাংস বিক্রি হচ্ছে। গরুর বাজার আরও কিছুদিন নিম্নমুখী থাকলে মাংসের দাম আরও কমবে।

নয়াবাজারে মাংস বিক্রেতা রিয়াদুল বলেন, কদিন আগেও গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। তখন দিনে ৫০ কেজি মাংস বিক্রি করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। ৬০০ টাকায় বিক্রি করায় বেচাবিক্রি আগের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেড়েছে।

ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, গরুর মাংস বাড়তি দামে বিক্রির জন্য একটি সিন্ডিকেট এতদিন কারসাজি করেছে। কিছুদিন আগে আমরা ঢাকার বড় মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারাও ভোক্তাসহনীয় মূল্যে মাংস বিক্রি করতে চেয়েছিল। আমি মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে গিয়েছি। কিন্তু কেউ গরুর মাংসের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে উদ্যোগ নেননি। তিনি জানান, খামারিদের সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বৈঠকের পর থেকেই খামারিরা কম দামে মাংস বিক্রি করছে। মূল্য নির্ধারণ করে দিলে ক্রেতারা আরও কম দামে গরুর মাংস খেতে পারবে।

নওগাঁ ও দিনাজপুর মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিলপর্যায়ে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকা, যা এক মাস আগে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবস্তা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা, যা এক মাস আগে ২ হাজার ২০০ টাকা ছিল। আর প্রতিবস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা, যা আগে ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে।

রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫৫-৫৬ টাকা, যা এক মাস আগে ৫০ টাকা ছিল। মাঝারি আকারের মধ্যে প্রতিকেজি বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। আগে এ চালের দর ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। আর প্রতিকেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা। আগে ছিল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা।

রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। যা সাত দিন আগে ৫৫-৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি প্যাকেট ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। যা সাত দিন আগে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিকেজি আলু এখনো ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি চিনি কিনতে ক্রেতার ১৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার চলতি মৌসুমের আমন ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, চালের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে ৬০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। নতুন ধান বাজারে উঠতে শুরু করেছে। ধানের দামও এখন কম।

এ অবস্থায় চালের দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া চলতি মৌসুমে আমনের ফলনও ভালো হয়েছে। দেশে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাদ্য মজুত আছে। চালের বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে প্রশাসন দৃষ্টি রাখছে। অজুহাত দিয়ে চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম